The Earth's rotation, orbit, consequences Geography Notes | পৃথিবীর আবর্তন, পরিক্রমণ ও তার ফল
১. পৃথিবীর গতি কয় প্রকার ও কি কি আলোচনা কর।
➺ পৃথিবীর গতি দু'রকমের, যথা : ① আবর্তন গতি বা আহ্নিক গতি এবং ② পরিক্রমণ বা বার্ষিক গতি।
① আবর্তন গতি : পৃথিবী তার নিজের মেরুদণ্ডের বা অক্ষের চারদিকে দিনে একবার নির্দিষ্ট গতিতে পশ্চিম থেকে পূর্বদিকে আবর্তন করে। পৃথিবীর এই আবর্তন গতিকে দৈনিক গতি বা আবর্তন গতি বা আহ্নিক গতি বলে।
![]() |
পৃথিবীর আহ্নিক ও বার্ষিক গতি |
② বার্ষিক গতি : পৃথিবী নিজের মেরুদণ্ডের চারিদিকে অবিরাম ঘুরতে ঘুরতে একটি নির্দিষ্ট পথে, নির্দিষ্ট দিকে (পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে) এবং নির্দিষ্ট গতিতে সূর্যের চারদিকে ঘুরছে। পৃথিবীর এই গতিকে বার্ষিক গতি বা পরিক্রমণ গতি বলে।
২. পৃথিবীর আবর্তন গতির স্বপক্ষে তিনটি যুক্তি দাও।
➺ পৃথিবী যে নিজের মেরুদণ্ডের ওপর আবর্তন করছে, তা পরপৃষ্ঠায় পরীক্ষাগুলোর সাহায্যে বোঝা যায়— ① পৃথিবী থেকে যেসব উপগ্রহ ও মহাকাশযান পাঠানো হয়েছে (যেমন : ভয়েজার), সেগুলোর পাঠানো ছবি থেকে দেখা যায় যে, পৃথিবী পশ্চিম থেকে পূর্বে আবর্তন করছে। এই ছবিগুলোই পৃথিবীর আবর্তন বা আহ্নিক গতির সর্বাধুনিক ও নির্ভুল প্রমাণ। ② বাতাস যখন স্থির থাকে তখন উঁচু স্তম্ভ থেকে কোন ভারী বস্তু (যেমন : পাথর) ফেললে দেখা যায় যেপাথরটি ঠিক সোজা না এসে একটু পূর্ব দিক ঘেঁসে মাটিতে পড়ে। এই পরীক্ষা থেকে প্রমাণিত হয় যে : পৃথিবী পশ্চিম দিক থেকে পূর্বদিকে আবর্তন করছে। ③ কোন গোলাকৃতি নমনীয় বস্তু যদি নিজের মেরুদণ্ডের ওপর লাটুর মত অনবরত ঘুরতে থাকে (আবর্তন করে) তবে তার মধ্যে একই সঙ্গে পরস্পর বিরোধী কেন্দ্রমুখী এবং কেন্দ্রবহির্মুখী শক্তির উদ্ভব হয়, যার প্রভাবে ঐ গোলাকৃতি বস্তু নিজের যে মেরুরেখার চারদিকে আবর্তন করে তার প্রান্তদেশ কিছুটা চাপা হয় এবং মধ্যভাগ কিছুটা স্ফীত হয়। পৃথিবীর প্রায় গোলাকার বা অভিগত গোলাকৃতি (উত্তর ও দক্ষিণ মেরু সামান্য চাপা এবং মধ্যভাগ একটু স্ফীত) পৃথিবীর আহ্নিক গতির অন্যতম প্রমাণ। আবর্তন গতির প্রভাবেই জন্মকালে নমনীয় পৃথিবীর উত্তর ও দক্ষিণ মেরু একটু চাপা এবং মধ্যভাগ সামান্য স্ফীত হয়ে যায়।
![]() |
পশ্চিম থেকে পূর্বদিকে পৃথিবীর আবর্তন |
৩. আহ্নিক গতির ফলাফল চিত্রসহ আলোচনা কর।
➺ আহ্নিক গতির ফলে দিন-রাত্রি সংঘটিত হয়, জোয়ার-ভাঁটা সৃষ্টি হয়, বায়ুপ্রবাহ ও সমুদ্রস্রোতের গতিবিক্ষেপ হয় এবং সময় গণনা করা হয়। এমনকি উদ্ভিদও প্রাণিজগৎ সৃষ্টির পিছনেও আহ্নিক গতির প্রভাব রয়েছে।
(১) দিন-রাত্রি : পৃথিবীর আবর্তন বা আহ্নিক গতির ফলে পৃথিবীর কোন স্থান সূর্যের আলোয় আলোকিত হচ্ছে, আবার কোথাও আলোর অভাবে রাতের অন্ধকার । পৃথিবীর নিজস্ব কোন আলো নেই। সূর্যের আলোই পৃথিবীকে আলোকিত করে। তবে পৃথিবী অভিগত গোলক বলে সূর্যের আলো পৃথিবীর সব জায়গায় সমানভাবে পড়ে না। আবর্তনের ফলে পৃথিবীর যে দিকটা সূর্যের সামনে আসে সে দিকটা আলোকিত হয়। ফলে সেখানে দিন হয় আর তার উল্টো দিকে যেখানে সূর্যের আলো পৌঁছয় না সেখানে হয় রাত্রি।
![]() |
পৃথিবীর আবর্তনের জন্য প্রভাত, মধ্যাহ্ন, সন্ধ্যা ও মধ্যরাত্রি হচ্ছে |
(২) জোয়ার-ভাঁটা : পৃথিবীর আবর্তনের ফলে যে স্থান যে সময়ে চন্দ্রের সামনে আসে তখন সেখানকার জলরাশি ফেঁপে উঠে জোয়ারের সৃষ্টি করে। ঠিক এর অন্যদিকে চন্দ্রের বিকর্ষণ শক্তির প্রভাবেও জোয়ার দেখা যায়। পৃথিবীর অন্যত্র জলতল নেমে গিয়ে ভাঁটার সৃষ্টি করে।
(৩) বায়ুপ্রবাহ ও সমুদ্রস্রোতের গতি-বিক্ষেপ : পৃথিবীর অভিগত গোলাকৃতির জন্য নিরক্ষরেখা থেকে উভয় মেরুর দিকে আবর্তনের গতিবেগ ক্রমশ কমতে থাকে। আবর্তন বেগের এইরকম তারতম্যের জন্য বায়ুপ্রবাহ, সমুদ্রস্রোত প্রভৃতি গতিশীল পদার্থের গতিপথ উত্তর গোলার্ধে ডান দিকে এবং দক্ষিণ গোলার্ধে বাম দিকে বেঁকে যায়। গতিবিক্ষেপের এই নিয়মটির আবিষ্কারক বিজ্ঞানী ফেরেলের নামানুসারে ফেরেলের সূত্র নামে পরিচিত।
![]() |
ফেরেলের সূত্র : উত্তর ও দক্ষিণ গোলার্ধে বায়ুপ্রবাহের গতিবিক্ষেপ |
(৪) উদ্ভিদ ও প্রাণিজগৎ সৃষ্টি : সূর্যালোকই পৃথিবীর সমস্ত জীবনের উৎস। পৃথিবীর নিয়মিতভাবে আবর্তনের জন্য ভূ-পৃষ্ঠের প্রায় প্রতিটি অংশে পরিমিতভাবে সূর্যালোক পড়ে যা পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন রকম উদ্ভিদ ও জীবজন্তু জন্মাতে সাহায্য করে। উদ্ভিদেরা সূর্যালোক থেকে দিনে শক্তি সঞ্চয় করে এবং রাত্রে ঐ শক্তি নিজেদের শারীরবৃত্তীয় কাজে লাগায়।
(৫) সময় গণনা : পৃথিবীর নিয়মিত আবর্তন মানুষের সময় গণনার সহায়ক হয়েছে। পৃথিবীর মোট আবর্তনকালকে ২৪ ভাগে ভাগ করে প্রত্যেক ভাগকে ১ ঘন্টা বলে। আবার ১ ঘন্টাকে ৬০ মিনিটে ও ১ মিনিটকে ৬০ সেকেন্ডে ভাগ করা হয়।
৪. পৃথিবীর বার্ষিক বা পরিক্রমণ গতির সপক্ষে কমপক্ষে ৩টি প্রমাণ দাও?
➺ আহ্নিক গতির মত পৃথিবীর বার্ষিক গতিও আমরা উপলব্ধি করতে পারি না। নিচের কয়েকটি প্রমাণের সাহায্যে বুঝতে পারা যায় যে পৃথিবী একটা নির্দিষ্ট পথে, নির্দিষ্ট দিকে এবং নির্দিষ্ট সময়ে সূর্যের চারদিকে ঘুরছে, যাকে বলা হয় পৃথিবীর বার্ষিক বা পরিক্রমণ গতি।
① বিভিন্ন কৃত্রিম উপগ্রহ ও মহাকাশযানের তোলা ছবি থেকে: পৃথিবী থেকে পাঠানো বিভিন্ন মহাকাশযান (যেমন, ভয়েজার) ও কৃত্রিম উপগ্রহের ক্যামেরায় তোলা ছবি থেকে দেখা যায় যে, পৃথিবী সূর্যকে পশ্চিম দিক থেকে পূর্বদিকে প্রদক্ষিণ করছে। এই ছবিগুলোই পৃথিবীর পরিক্রমণ গতির প্রত্যক্ষ ও সর্বাধুনিক প্রমাণ। ② সূর্যের অন্যান্য গ্রহের পরিক্রমণ গতি থেকে : দূরবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে দেখা যায় যে, মঙ্গল, শনি, বুধ, শুক্র প্রভৃতি সূর্যের অন্যান্য গ্রহগুলো সূর্যের চারধারে পরিক্রমণ করে। যেহেতু পৃথিবী নিজেও সূর্যের একটি গ্রহ সুতরাং এটাই স্বাভাবিক যে পৃথিবীও সূর্যের চারদিকে ঘুরছে। ③ নক্ষত্রদের আপাত গতির সাহায্যে : রাত্রে আকাশে নির্দিষ্ট কয়েকটি নক্ষত্রকে লক্ষ্য করলে দেখা যায় যে নক্ষত্রগুলো ক্রমশ আকাশে পূর্ব দিক থেকে পশ্চিম দিকে সরে যাচ্ছে। এইভাবে পূর্ব থেকে পশ্চিমে সরে যেতে যেতে হঠাৎ একদিন নক্ষত্রগুলো অদৃশ্য হয়। আবার ঠিক একবছর বাদে তাদের আবার আগেকার স্থানে দেখা যায়। এ থেকে প্রমাণিত হয় যে পৃথিবী একটা নির্দিষ্ট পথে সরে সরে স্থান পরিবর্তন করে। ④ সূর্যের পরিবর্তিত অবস্থান থেকে : পৃথিবী যদি একই স্থানে থেকে আবর্তন করত তবে প্রতিদিন সূর্যকে একই স্থানে উদিত হতে দেখা যেত। বাস্তবে দেখা যায় যে বছরে ৬ মাস সূর্য একটু একটু করে উত্তরের দিকে সরে গিয়ে পূর্ব আকাশে ওঠে আর বছরের বাকি ৬ মাস পৃথিবী একটু একটু করে দক্ষিণের দিকে সরে গিয়ে পূর্ব আকাশে উদিত হয়। কেবলমাত্র ২১শে মার্চ ও ২৩ শে সেপ্টেম্বর তারিখ দুটিতে সূর্য ঠিক পৃথিবীর পূর্ব আকাশে উদিত হয় ও পশ্চিমে অস্ত যায়। পৃথিবীর বার্ষিক গতির জন্যেই এই রকম হয়। ⑤ ঋতু পরিবর্তন ও দিনরাত্রির হ্রাস বৃদ্ধি থেকে : পৃথিবীর যদি বার্ষিক গতি না থাকত, তবে পৃথিবীর কোথাও ঋতু পরিবর্তন ও দিন-রাত্রির হ্রাসবৃদ্ধি হত না এবং পৃথিবীর দুই মেরুদেশে সর্বক্ষণ দিন অথবা সর্বক্ষণ রাত্রি বিরাজ করত। ⑥ মহাকর্ষ সূত্র থেকে : নিউটনের মহাকর্ষ সূত্র অনুসারে হাল্কা ও ছোট বস্তুর পক্ষে বড় বস্তুর চারপাশ প্রদক্ষিণ করাই স্বাভাবিক। এই সূত্র অনুসারে পৃথিবীর পক্ষে প্রায় ১৩ লক্ষ গুণ বড় সূর্যের চারদিক প্রদক্ষিণ করাই স্বাভাবিক ঘটনা।
৫. পৃথিবীর বার্ষিক গতির ফলাফল সংক্ষেপে বর্ণনা কর।
➺ বার্ষিক গতির অন্যতম ফলাফল হল : (ক) দিনরাত্রির হ্রাসবৃদ্ধি ও (খ) ঋতু পরিবর্তন।
𒀭 (ক) দিনরাত্রির হ্রাসবৃদ্ধি : সূর্য প্রদক্ষিণের সময় পৃথিবী আপন মেরুরেখাকে কক্ষপথের সঙ্গে `66\frac{1}{2}` ° কোণে হেলিয়ে রাখে বলে বছরের বিভিন্ন সময়ে পৃথিবীতে দিনরাত্রির হ্রাসবৃদ্ধি ঘটে।
![]() |
২১শে ডিসেম্বর মকরক্রান্তি এবং ২১শে জুন কর্কটক্রান্তি |
পৃথিবীর মেরুরেখা কক্ষতলের উপর `66\frac{1}{2}`° কৌণিক ভাবে অবস্থান করে বলে ছায়াবৃত্ত নিরক্ষরেখা ছাড়া অন্যান্য সমাক্ষরেখাগুলিকে অসমানভাবে বিভক্ত করে। ফলে পৃথিবীপৃষ্ঠে দিন- রাত্রির হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটে। ২১শে মার্চ ও ২৩শে সেপ্টেম্বর তারিখে পৃথিবী আপন কক্ষপথে এমনভাবে অবস্থান করে যে, সূর্যরশ্মি নিরক্ষরেখায় লম্বভাবে পড়ে ফলে এই সময় পৃথিবীর উত্তর ও দক্ষিণ গোলার্ধের সর্বত্র দিন-রাত্রি সমান হয়। নিরক্ষরেখায় সারা বছরই দিন-রাত্রি সমান । ২২শে মার্চ থেকে ২২শে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ে উত্তর গোলার্ধে দিন বড় ও রাত্রি ছোট হয়। দক্ষিণ গোলার্ধে তখন এর বিপরীত অবস্থান দেখা যায় বলে সেখানে দিন ছোট ও রাত্রি বড় হয়। ২৪শে সেপ্টেম্বর থেকে ২০ মার্চ পর্যন্ত সময়ে দক্ষিণ গোলার্ধে দিন বড় এবং রাত্রি ছোট হয়। উত্তর গোলার্ধে বিপরীত অবস্থার জন্য দিন ছোট ও রাত্রি বড় হয়।
𒀭 (খ) ঋতু পরিবর্তন : বার্ষিক গতির ফলে (১) পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে দিন-রাত্রির হ্রাসবৃদ্ধির জন্য উত্তাপের হ্রাসবৃদ্ধি এবং (২) পৃথিবীর কক্ষতলের সঙ্গে মেরুরেখার `66\frac{1}{2}`° কৌণিক অবস্থানের জন্য ভূ-পৃষ্ঠের বিভিন্ন স্থানে লম্ব ও তির্যকভাবে পতিত সূর্যরশ্মির জন্য উত্তাপের পরিবর্তন—প্রধানত এই দুই কারণে পৃথিবীতে ঋতু পরিবর্তন হয়। সূর্য যখন পৃথিবীর যে গোলার্ধে অবস্থান করে তখন সেই গোলার্ধে দিন বড় ও রাত্রি ছোট হয় এবং সূর্যরশ্মি অপেক্ষাকৃত লম্বভাবে পড়ে। বিপরীত গোলার্ধে তখন রাত্রি বড় ও দিন ছোট হয়
![]() |
পৃথিবীর বার্ষিক গতির ফলে ঋতু পরিবর্তন হয় |
এবং সূর্যরশ্মি তির্যকভাবে পড়ে। দিন যদি বড় হয় এবং সূর্যরশ্মি প্রায় লম্বভাবে পড়ে তাহলে পৃথিবী দিনের বেলায় যে তাপ গ্রহণ করে, ছোট রাতে সেই তাপ পুরোটা বিকিরণ করতে পারে না। ফলে ঐ স্থানে তাপ সঞ্চিত হয়ে আবহাওয়া উষ্ণ হয় এবং গ্রীষ্মকালীন আবহাওয়া পরিলক্ষিত হয়। স্বভাবতই যখন যে গোলার্ধে দিন বড় হয় তখন সেই গোলার্ধে গ্রীষ্মকাল পরিলক্ষিত হয়। বিপরীত গোলার্ধে তখন শীতকাল শুরু হয়। এইভাবে পর্যায়ক্রমে পৃথিবীতে ঋতু পরিবর্তন হয়।
৬. ডিসেম্বর মাসে বিজ্ঞানীরা অ্যান্টার্কটিকা অভিযানে যান কেন?
➺ পৃথিবীর সূর্য পরিক্রমার সময়, বছরের কয়েকটি বিশেষ দিনে মধ্যাহ্ন সূর্যরশ্মি পর্যায়ক্রমে পৃথিবীর নির্দিষ্ট কয়েকটি অক্ষরেখার ওপর লম্বভাবে পড়ে। সেই সময় ভূ-পৃষ্ঠের অন্যত্র সূর্যরশ্মি তির্যকভাবে পতিত হয়। ডিসেম্বর মাসে উত্তর গোলার্ধে যখন শীতকাল, তখন পৃথিবীর দক্ষিণ মেরু সূর্যের একটু কাছে আসার ফলে দক্ষিণ গোলার্ধে সূর্যের আলো খাড়াভাবে পড়ে। এইজন্য দক্ষিণ গোলার্ধে দিন বড় এবং রাত ছোট হয়। দিন বড় হওয়ার দরুন এই সময় দক্ষিণ গোলার্ধের ভূ-পৃষ্ঠ ও বায়ুস্তর তুলনামূলক ভাবে গরম হওয়ার সুযোগ পায় অনেক বেশী। ফলে ডিসেম্বর মাসে দক্ষিণ গোলার্ধ তথা অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশে গ্রীষ্মকালের সূচনা হয়।
পৃথিবীর দক্ষিণ গোলার্ধে দক্ষিণ মেরু বা কুমেরুকে কেন্দ্র করে বৃত্তাকারে অবস্থিত চিরতুষারময় মহাদেশের তাপমাত্রা গ্রীষ্মকালেই থাকে হিমাঙ্কেরও ৪০° সেলসিয়াসের নীচে (- 40°C) আর শীতকালে থাকে আরও অনেক অনেক কম। শীতকালে এখানে ক্রমাগত তুষারপাত এবং ভয়াবহ তুষারঝড় হয়। এই আবহাওয়াতে শীতকালে অ্যান্টার্কটিকায় বৈজ্ঞানিক গবেষণা করা তো দূরের কথা, পদার্পণ করাও অসম্ভব হয়ে পড়ে। তাই বৈজ্ঞানিক গবেষণা চালানোর জন্য বিজ্ঞানীরা অ্যান্টার্কটিকার ভয়াবহ শীতকালের তুলনায় মন্দের ভালো গ্রীষ্মকালকেই বেছে নেন।
৭. অ্যান্টার্কটিকা বা অস্ট্রেলিয়ার অধিবাসীরা গ্রীষ্মকালে বড়দিন পালন করে কেন?
➺ পৃথিবীর সূর্য পরিক্রমার সময়, বছরের কয়েকটি বিশেষ দিনে মধ্যাহ্ন সূর্যরশ্মি পর্যায়ক্রমে পৃথিবীর নির্দিষ্ট কয়েকটি অক্ষরেখার ওপর লম্বভাবে পড়ে। সেই সময় ভূ-পৃষ্ঠের অন্যত্র সূর্যরশ্মি তির্যকভাবে পতিত হয়। ডিসেম্বর মাসে পৃথিবীর দক্ষিণ গোলার্ধ সূর্যের সব চেয়ে কাছে আসে এবং সূর্যকিরণ দক্ষিণ- গোলার্ধে মকরক্রান্তি রেখার ওপর লম্বভাবে পড়ে। ফলে ২১শে ডিসেম্বর তারিখে দক্ষিণ গোলার্ধে দিন সবচেয়ে বড় ও রাত সবচেয়ে ছোট হয় (১৪ ঘন্টা দিন ১০ ঘন্টা রাত)। দিন বড় হওয়ার দরুন এই সময় দক্ষিণ গোলার্ধের ভূ-পৃষ্ঠ ও বায়ুস্তর তুলনামূলকভাবে গরম হওয়ার অনেক বেশী সুযোগ পায়। ফলে ডিসেম্বর মাসে দক্ষিণ গোলার্ধ তথা অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশে গ্রীষ্মকালের সূচনা হয়।
শীতকালে ২৫শে ডিসেম্বর তারিখে উত্তর গোলার্ধে বড়দিন বা খ্রীষ্টমাস উৎসব পালিত হয়, এই সময় দক্ষিণ গোলার্ধে গ্রীষ্মকালের সূচনা হয়। এইজন্য বলা হয় যে, উত্তর গোলার্ধের অধিবাসীরা শীতকালে (২৫শে ডিসেম্বর) বড়দিন পালন করলেও ঐ সময় দক্ষিণ গোলার্ধে অবস্থিত অস্ট্রেলিয়া এবং অ্যান্টার্কটিকার অধিবাসীরা গ্রীষ্মকালে বড়দিন পালন করে।
৮. সৌরদিন কাকে বলে?
➺ পৃথিবীর নিজের মেরুদণ্ডের উপর একবার পশ্চিম থেকে পূর্বে আবর্তন করতে সময় লাগে ২৩ ঘণ্টা ৫৬ মিনিট বা মোটামুটি ২৪ ঘণ্টা বা একদিন। একে সৌরদিন বলে।
৯. পৃথিবীর অক্ষ এবং কক্ষপথ কাকে বলে?
➺ পৃথিবীর মেরুদণ্ড বা উত্তর মেরু ও দক্ষিণ মেরুর সংযোগকারী রেখাকে অক্ষ বলে। পৃথিবী যে নির্দিষ্ট পথে সূর্যকে পরিক্রমণ করে তাকে কক্ষপথ বলে। পৃথিবীর কক্ষপথের মোট দৈর্ঘ্য প্রায় ৯৬ কোটি কিমি.। যে সমতলে কক্ষটি অবস্থিত তাকে কক্ষতল বলে। পৃথিবীর কক্ষপথটি উপবৃত্তাকার।
১০. পৃথিবীর সব স্থানে আহ্নিক গতির বেগ একরকম হয় না কেন?
➺ পৃথিবী একটি অভিগত গোলক বলে পৃথিবীপৃষ্ঠের পরিধি সর্বত্র সমান নয়। ফলে,পৃথিবীপৃষ্ঠে সমস্ত স্থানের আবর্তনের বেগও সমান নয়। নিরক্ষরেখায় পৃথিবীর পরিধি সবচেয়ে বেশী (প্রায় 80,000 কি.মি.) । এইজন্য নিরক্ষরেখায় পৃথিবীর আবর্তনের বেগ সবচেয়ে বেশী, ঘণ্টায় প্রায় ১,৭০০ কি.মি.। কলকাতায় পৃথিবীর আহ্নিক গতির বেগ ঘণ্টায় প্রায় ১,৫৩৬ কিলোমিটার। আবর্তনের বেগ নিরক্ষরেখার উত্তরে ও দক্ষিণে কমতে কমতে মেরুদ্বয়ে প্রায় নিঃশেষ হয়ে যায়।
১১. পৃথিবীর আবর্তন গতির ফলে আমরা পৃথিবীপৃষ্ঠ থেকে ছিটকে পড়ি না কেন?
➺ ভূ-পৃষ্ঠে অবস্থান করার সঙ্গে সঙ্গে মানুষ, জীবজন্তু, যাবতীয় জিনিসপত্র প্রভৃতি, পৃথিবীর সঙ্গে একই গতিতে আবর্তন করে বলে, আমরা পৃথিবীর আবর্তন গতি অনুভব করতে পারি না। অন্যদিকে ভূ-পৃষ্ঠে অবস্থিত সমস্ত বস্তুকে পৃথিবী অভিকর্ষশক্তির বলে নিজের কেন্দ্রের দিকে আকর্ষণ করে বলে আমরা পৃথিবীপৃষ্ঠ থেকে ছিটকে পড়ি না।
![]() |
পৃথিবীর সর্বত্র আহ্নিক গতির বেগ সমান হয় না |
১২. সূর্যের আপাত দৈনিক গতি বা আপাত সঞ্চরণ কাকে বলে?
➺ আহ্নিক গতির সময় পৃথিবী পশ্চিম দিক থেকে পূর্ব দিকে আবর্তন করে বলে আপাতদৃষ্টিতে সূর্যকে পূর্ব দিক থেকে পশ্চিম দিকে গতিশীল বলে মনে হয়। এই গতিকে সূর্যের আপাত দৈনিক গতি বা আপাত সঞ্চরণ বলে।
![]() |
সূর্যের আপাত দৈনিক গতি |
১৩. বার্ষিক রবি সঞ্চরণবা রবি মার্গ কাকে বলে?
➺ সূর্যের আপাত গতির বিভিন্ন পর্যায়ে বছরের বিভিন্ন সময় সূর্য পৃথিবীর নিরক্ষরেখা, কর্কটক্রান্তি রেখা এবং মকরক্রান্তি রেখার ওপর লম্বভাবে কিরণ দেয়। পৃথিবীর এই তিনটি রেখার ওপর সূর্যের আপাত বার্ষিক গতিশীলতা বার্ষিক রবি সঞ্চরণ বা রবিমার্গ নামে পরিচিত।
১৪. নিরক্ষীয় অঞ্চলে সর্বদা গ্রীষ্মকাল কেন কারণ দেখাও।
➺ ভূ-পৃষ্ঠের বিভিন্ন স্থানে ঋতু পরিবর্তনের কারণ হল বছরের বিভিন্ন সময়ে তাপের পার্থক্য। নিরক্ষীয় অঞ্চলে সর্বদা গ্রীষ্মকাল, সেখানে শীতঋতু নেই। এর কারণ হল, নিরক্ষরেখা পৃথিবীর ঠিক মধ্যেখানে অবস্থিত বলে নিরক্ষরেখার ওপর সারা বছরই দিন-রাত্রির দৈর্ঘ্য সমান (১২ ঘন্টা দিন ও ১২ ঘন্টা রাত্রি) হওয়ায় নিরক্ষীয় অঞ্চলে বছরে কখনও ঋতু পরিবর্তন হয় না। এই অঞ্চলে সূর্যরশ্মি বছরের সব সময় ‘প্রায় লম্বভাবে' বা লম্বভাবে পড়ে। ২১শে মার্চ ও ২৩শে সেপ্টেম্বর নিরক্ষরেখার উপর সূর্যরশ্মি লম্বভাবে পড়ে। এই সময় দিনের বেলায় নিরক্ষীয় অঞ্চল যে তাপ গ্রহণ করে, রাতে সেই তাপ পুরোটা বিকিরণ করতে পারে না, ফলে এই অঞ্চলে তাপ সঞ্চিত হয়ে আবহাওয়া উষ্ণ হয় এবং গ্রীষ্মকালীন আবহাওয়ার সৃষ্টি হয়। উষ্ণতার হ্রাস-বৃদ্ধি ও সূর্যরশ্মির পতন কোণের পার্থক্য ঘটে না বলে নিরক্ষীয় অঞ্চলে সবসময়েই উত্তাপ বেশী থাকে এবং বছরের প্রায় সবসময়েই আর্দ্র গ্রীষ্মকাল বিরাজ করে।
১৫. সূর্যের উত্তরায়ণ কাকে বলে?
➺ ২১শে ডিসেম্বরের মকরসংক্রান্তি থেকে ২১শে জুনের কর্কটসংক্রান্তি পর্যন্ত (অর্থাৎ `23\frac{1}{2}` ° দক্ষিণ অক্ষাংশ থেকে `23\frac{1}{2}` ° উত্তর অক্ষাংশ পর্যন্ত) সময়ে সূর্যের উত্তরমুখী আপাত গতিকে উত্তরায়ণ বলা হয়।
১৬. সূর্যের দক্ষিণায়ন কাকে বলে?
➺ ২১শে জুনের কর্কটসংক্রান্তি থেকে ২১ শে ডিসেম্বরের মকরসংক্রান্তি পর্যন্ত (অর্থাৎ `23\frac{1}{2}`° উত্তর অক্ষাংশ থেকে `23\frac{1}{2}` ° দক্ষিণ অক্ষাংশ পর্যন্ত) সময়ে সূর্যের দক্ষিণমুখী আপাত গতিকে দক্ষিণায়ন বলা হয়।
১৭. নিরক্ষরেখার `23\frac{1}{2}`° উত্তর সমাক্ষরেখাকে কর্কটক্রান্তি রেখা বলা হয় কেন?
➺ নিরক্ষরেখার `23\frac{1}{2}`° উত্তর সমাক্ষরেখা সূর্যের আপাত গতির সর্ব উত্তর-সীমা বলে এর নামকরণ করা হয়েছে কর্কটক্রান্তি রেখা।
১৮. গ্রীষ্মকালের তুলনায় শীতকালে দিন ছোট হয় কেন?
➺ সূর্য পরিক্রমার সময়ে পৃথিবীর মেরুরেখা তার কক্ষতলের সঙ্গে `66\frac{1}{2}`° কোণে অবস্থান করার জন্য শীতকালে (ডিসেম্বর মাসে) পৃথিবীর দক্ষিণ গোলার্ধ সূর্যের কাছে সরে আসে এবং ঐ সময় পৃথিবীর উত্তর গোলার্ধ দক্ষিণ গোলার্ধের তুলনায় সূর্য থেকে বেশী দূরে অবস্থান করে। এই সময় সূর্য কিরণ দক্ষিণ গোলার্ধে লম্বভাবেবা ‘প্রায় লম্বভাবে’পড়ে এবং উত্তর গোলার্ধে তির্যকভাবে পড়ে। ফলে এই সময় উত্তর গোলার্ধে রাত্রি বড় এবং দিন ছোট হয়। বলা বাহুল্য, দক্ষিণ গোলার্ধে এই একই সময় দিন বড় এবং রাত ছোট হয়, অর্থাৎ দক্ষিণ গোলার্ধে তখন গ্রীষ্মকাল। ২১শে ডিসেম্বর মকর সংক্রান্তির দিন পৃথিবীর উত্তর গোলার্ধ সূর্যের সবচেয়ে দূরবর্তী হয়, ফলে ঐ দিন পৃথিবীর উত্তর গোলার্ধে দিন সবচেয়ে ছোট এবং রাত সবচেয়ে বড় হয় (১৪ ঘণ্টা রাত ও ১০ ঘণ্টা দিন)।
১৯. শীতকালের তুলনায় গ্রীষ্মকালে দিন বড় হয় কেন?
➺ গ্রীষ্মকালে (জুন মাসে) পৃথিবীর উত্তর গোলার্ধ দক্ষিণ গোলার্ধের তুলনায় সূর্যের অপেক্ষাকৃত নিকটবর্তী হয়। এইসময় ছায়াবৃত্ত নিরক্ষরেখার উত্তর ও দক্ষিণে সমাক্ষরেখাগুলোকে এমনভাবে ভাগ করে যে, উত্তর গোলার্ধে দিন বড় এবং রাত্রি ছোট হয়। সূর্যের উত্তরায়ণের ফলে ২১শে জুন কর্কটসংক্রান্তির দিন পৃথিবীর উত্তর গোলার্ধ সূর্যের সবচেয়ে নিকটবর্তী হয় এবং সূর্যকিরণ উত্তর গোলার্ধে লম্বভাবে পড়ে। ফলে ২১শে জুন তারিখটিতে উত্তর গোলার্ধে দিনের পরিমাণ সবচেয়ে বেশী এবং রাতের পরিমাণ সবচেয়ে কম হয় (১৪ ঘন্টা দিন এবং ১০ ঘন্টা রাত)।
২০. পৃথিবীর কোন অঞ্চলে বছরের সব সময়েই গ্রীষ্মকাল এবং কোন অঞ্চলে সারা বছরই শীতকাল?
➺ (১) নিরক্ষীয় অঞ্চলে সর্বদা দিন-রাত্রি সমান বলে এখানে সবসময়ই গ্রীষ্মকাল, ফলে সেখানে কোন ঋতু-পরিবর্তন হয় না এবং (২) মেরু অঞ্চলে স্বল্পস্থায়ী সূর্যকিরণ সর্বদা তির্যকভাবে পড়ে বলে এখানে উষ্ণতার পরিমাণ সামান্য, তাই সেখানে সর্বদা শীতকাল।
২১. অপসূর ও অনুসুর বলতে কি বোঝ?
➺ পৃথিবীর পরিক্রমণের সময় সূর্য ও পৃথিবীর মধ্যে দূরত্ব সর্বদা সমান থাকে না। এর কারণ হল সূর্য পৃথিবীর কক্ষপথের একটি নাভিতে অবস্থিত। ৪ঠা জুলাই সূর্য থেকে পৃথিবীর দূরত্ব সবচেয়ে বেশী (১৫ কোটি ২০ লক্ষ কিমি.) হয়। একে পৃথিবীর অপসূর অবস্থান বলে। অন্যদিকে ৩রা জানুয়ারী সূর্য থেকে পৃথিবীর দূরত্ব সবচেয়ে কম (১৪ কোটি ৭০ লক্ষ কিমি.) একে পৃথিবীর অনুসূর অবস্থান বলে।
২২. সৌর বৎসর কাকে বলে?
➺ একবার সূর্যকে পূর্ণ পরিক্রম করতে পৃথিবীর ৩৬৫ দিন ৫ ঘণ্টা ৪৮ মিনিট ৪৬ সেকেন্ড বা ৩৬৫ দিন ৬ ঘণ্টা সময় লাগে। একে সৌর বৎসর বলে।
২৩. নিশীথ সূর্য কাকে বলে এবং কেন?
➺ পৃথিবীর অভিগত গোলাকৃতি, পৃথিবীর উপবৃত্তাকার কক্ষপথ। পৃথিবীর মেরুরেখার সর্বদা একই মুখে অবস্থান এবং সূর্য প্রদক্ষিণের সময় পৃথিবীর কক্ষপথের সঙ্গে তার মেরুরেখার `66\frac{1}{2}`° কোণে অবস্থানের জন্য বছরে একবার পৃথিবীর উত্তর গোলার্ধ এবং আর একবার পৃথিবীর দক্ষিণ গোলার্ধ সূর্যের নিকটবর্তী হয়, এর ফলে বছরের একই সময় সূর্য কিরণ উভয় গোলার্ধে একইভাবে পড়ে না। ২১ শে মার্চ থেকে ২৩ শে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১৮৬ দিন সময়ে সুমেরু বৃত্ত অথবা `66\frac{1}{2}` ° উত্তর অক্ষরেখার উত্তরে অবস্থিত উত্তর মেরু অঞ্চলে ২৪ ঘণ্টাই সূর্যের আলো থাকে। ফলে স্থানীয় সময় অনুসারে গভীর রাতেও উত্তর মেরুর আকাশে সূর্য দেখা যায়, একে নিশীথ সূর্য বলে।
২৪. নিশীথ সূর্যের দেশ পৃথিবীর কোন অঞ্চলকে বলে ও কেন বলে?
➺ নরওয়ের উত্তর সীমার হ্যামারফেস্ট (`70\frac{1}{2}`° উঃ) ও আশেপাশের অঞ্চলকে নিশীথ সূর্যের দেশ বলে। ২১ শে মার্চ থেকে ২৩ শে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত উত্তর মেরু অঞ্চলে ক্রমাগত ৬ মাস ২৪ ঘণ্টাই দিন হয়। স্বভাবতই ঐ সময়ের মধ্যে বেশ কয়েক মাস হ্যামারফেস্ট ও আশেপাশের অঞ্চলে
গভীর রাত্রের সময়েও সূর্যালোক দেখা যায়। এজন্য ঐ অঞ্চলকে নিশীথ সূর্যের দেশ বলে।
২৫. আহ্নিক গতির ফলাফল কি কি?
➺ পৃথিবীর আহ্নিক গতির ফলে : (১) দিন-রাত্রি, (২) জোয়ার-ভাঁটা এবং (৩) উদ্ভিদ ও প্রাণীজগৎ সৃষ্টি এবং (৪) বায়ু প্রবাহ ও সমুদ্র স্রোতের গতিবিক্ষেপ হয়।
২৬. পৃথিবীর বার্ষিক গতির ফলাফল কি কি?
➺ বার্ষিক গতির ফলে প্রধানত : (১) দিন-রাত্রির হ্রাস বৃদ্ধি ও (২) ঋতু পরিবর্তন।
২৭. কুমেরু ও সুমেরু প্রভা কি?
➺ ২১শে মার্চ থেকে ২৩শে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সুমেরুতে ক্রমাগত দিন ও কুমেরুতে ক্রমাগত রাত্রি হয়। ২৩শে সেপ্টেম্বর থেকে ২১শে মার্চ পর্যন্ত সুমেরুতে ক্রমাগত রাত্রি এবং কুমেরুতে ক্রমাগত দিন। উভয় মেরু অঞ্চলে এইরকম ছয়মাস ব্যাপী অন্ধকারের সময় মাঝে মাঝে আকাশে রামধনুর মত অস্পষ্ট আলো দেখা যায়। এই আলোকে সুমেরু অঞ্চলে সুমের প্রভা এবং কুমেরু অঞ্চলে কুমেরু প্রভা বলে।
২৮. পৃথিবীতে দিনরাত্রি হয় কেন?
➺ পৃথিবীর আবর্তন বা আহ্নিক গতির ফলে পৃথিবীর কোন স্থানে পর্যায়ক্রমে দিন ও রাত্রি হয়। আহ্নিক গতির ফলে সূর্যের চারদিকে ঘুরতে ঘুরতে পৃথিবীর যে দিক সূর্যের সামনে আসে সেই দিকটা আলোকিত হওয়ার ফলে সেখানে দিন হয়; আর তার উল্টোদিকে, যেখানে সূর্যের আলো পৌঁছায় না, সেখানে হয় রাত্রি।
২৯. ঋতু পরিবর্তনের কারণ কি?
➺ বছরের বিভিন্ন সময়কে উত্তাপের পার্থক্য অনুসারে যে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হয় তাদের প্রত্যেকটি ঋতু বলে। পৃথিবীর বার্ষিক গতির ফলে : (১) পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে দিনরাত্রির হ্রাস বৃদ্ধির জন্য উত্তাপের হ্রাস-বৃদ্ধি এবং (২) পৃথিবীর কক্ষপথের তলের সঙ্গে মেরুদণ্ডের ৬৬০ কৌণিক অবস্থানের ফলে ভূ-পৃষ্ঠের বিভিন্ন স্থানে লম্ব ও তির্যকভাবে পতিত সূর্যরশ্মির জন্য উত্তাপের পরিবর্তন, প্রধানত এই দুই কারণে পৃথিবীতে ঋতু পরিবর্তন হয়।
৩০. কোন কোন দিন পৃথিবীর সর্বত্র দিন ও রাত্রি সমান হয় এবং কেন হয়?
➺ ২১শে মার্চ ও ২৩শে সেপ্টেম্বর পৃথিবীর সর্বত্র দিন-রাত্রি সমান। ২১শে মার্চ ও ২৩শে সেপ্টেম্বর তারিখে সূর্য পরিক্রমার সময় পৃথিবী আপন কক্ষপথে এমনভাবে অবস্থান করে যে সূর্যরশ্মি নিরক্ষরেখার উপর লম্বভাবে পড়ে এবং উভয় মেরু সূর্য থেকে সমান দূরে অবস্থান করে। ফলে ছায়াবৃত্ত ৯০° উত্তরে সুমেরু এবং ৯০° দক্ষিণে কুমেরু পর্যন্ত বিস্তৃত হয় এবং নিরক্ষরেখা ও অন্যান্য সমাক্ষরেখাকে সমান দু-অংশে বিভক্ত করে। অর্থাৎ ২৩শে মার্চ ও ২৩শে সেপ্টেম্বর এই দুই দিন পৃথিবীর অর্ধাংশ আলোকিত অংশে এবং বাকি অর্ধাংশ অন্ধকারে থাকে। ফলে পৃথিবীর সর্বত্র ঐ দুদিন দিন-রাত্রি সমান হয়।
৩১. ফেরেল সূত্র বলিতে কি বোঝ?
➺ পৃথিবীর আবর্তনঘটিত বলের প্রভাবে ভূপৃষ্ঠের নিয়ত বায়ুপ্রবাহগুলো (আয়নবায়ু,পশ্চিমাবায়ু ও মেরুবায়ু) সরাসরি উত্তর-দক্ষিণে প্রবাহিত হয় না। এরা উত্তর গোলার্ধে ডানদিকে (ঘড়ির কাঁটার দিকে) এবং দক্ষিণ গোলার্ধে বাঁদিকে (ঘড়ির কাঁটার বিপরীত দিকে) সামান্য বেঁকে প্রবাহিত হয়। বৈজ্ঞানিক। ফেরেল বিষয়টি আবিষ্কার করেন বলে, বায়ুপ্রবাহের এই নিয়ম ‘ফেরেল সূত্র' নামে পরিচিত।
৩২. মেরু অঞ্চলে সর্বদা শীতকাল কেন কারণ দেখাও।
➺ পৃথিবীর মেরুরেখা কক্ষতলের সঙ্গে `66\frac{1}{2}`° কোণে অবস্থান করে বলে ২১শে মার্চ থেকে ২৩শে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৬ মাস সুমেরু বৃত্তে ক্রমাগত দিন ও কুমেরু বৃত্তে ছয়মাস রাত্রি। ২৩শে সেপ্টেম্বর থেকে ২১শে মার্চ পর্যন্ত কুমেরু বৃত্তে ছয়মাস দিন এবং সুমেরু বৃত্তে ছয়মাস রাত্রি। সুতরাং মেরু অঞ্চলে ছয়মাস দিন ও ছয়মাস রাত্রি। মেরু অঞ্চলে যে সময় দিন বিরাজ করে সে সময় সূর্যরশ্মিও বেশী তির্যকভাবে পড়ে। স্বভাবতই দীর্ঘ ৬ মাস দিন থাকলেও সূর্যরশ্মি তির্যকভাবে পড়ার জন্য মেরু অঞ্চলে ভূ-পৃষ্ঠ যতটা উত্তপ্ত হয়, দীর্ঘ ৬ মাস রাত্রিকালে তার থেকে অনেক বেশী তাপ বিকিরিত হয়। ফলে সামগ্রিকভাবে মেরু অঞ্চলে সর্বদাই স্বল্প উষ্ণতার প্রাধান্য পরিলক্ষিত হয় অর্থাৎ সবসময়েই শীতঋতু বিরাজ করে।
৩৩. পৃথিবীতে দিনরাত্রির হ্রাস-বৃদ্ধি হয় কেন?
➺ পৃথিবীতে দিনরাত্রির হ্রাস-বৃদ্ধির প্রধান কারণ : (১) পৃথিবীর অভিগত গোলাকৃতি, (২) পৃথিবীর উপবৃত্তাকার কক্ষপথ, (৩) পৃথিবীর অবিরাম আবর্তন ও পরিক্রমণ গতি,(৪) পৃথিবীর মেরুরেখার সর্বদা একই মুখে অবস্থান এবং (৫) সূর্য প্রদক্ষিণের সময় পৃথিবীর মেরুরেখা তার কক্ষতলের সঙ্গে `66\frac{1}{2}`° কোণে হেলানোভাবে অবস্থান করায় বছরের বিভিন্ন সময়ে পৃথিবীতে দিনরাত্রির হ্রাস-বৃদ্ধি হয়।
৩৪. টীকা লেখো : কর্কটসংক্রান্তি?
➺ নিজের কক্ষতলের সঙ্গে `66\frac{1}{2}`° কোণ করে পৃথিবীর মেরুরেখা নিজের কক্ষপথ ধরে অবিরাম সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে চলেছে। এভাবে পৃথিবীর সূর্য পরিক্রমার সময়, বছরের কয়েকটি বিশেষ দিনে মধ্যাহ্ন সূর্যরশ্মি পর্যায়ক্রমে পৃথিবীর নির্দিষ্ট কয়েকটি অক্ষরেখার ওপর লম্বভাবে পড়ে। সেই সময় ভূ-পৃষ্ঠের অন্যত্র সূর্যরশ্মি তির্যকভাবে পতিত হয়। ফলে একদিকে যেমন : দিন-রাত্রির হ্রাস-বৃদ্ধি হয়, অন্যদিকে তেমনি তাপমাত্রারও পরিবর্তন ঘটে। ২১শে জুন তারিখে পৃথিবীর উত্তর গোলার্ধ সূর্যের সবচেয়ে কাছে আসে। ঐদিন সূর্যকিরণ কর্কটক্রান্তি রেখার ওপর লম্বভাবে পড়ে বলে, ২১শে জুন তারিখটিতে উত্তর গোলার্ধে দিন সবচেয়ে বড় এবং রাত সবচেয়ে ছোট হয় (১৪ ঘণ্টা দিন আর ১০ ঘণ্টা রাত্রি) আর দক্ষিণ গোলার্ধে ঠিক এর বিপরীত অবস্থার সৃষ্টি হয় (১০ ঘণ্টা দিন, ১৪ ঘণ্টা রাত্রি)। ২১শে জুন সূর্য উত্তরায়ণের শেষ সীমা কর্কটক্রান্তি রেখায় পৌঁছায় বলে ২১শে জুন দিনটিকে কর্কটসংক্রান্তি উত্তর অয়নান্ত বলে।
![]() |
২১শে জুন কর্কটক্রান্তি |
৩৫. টীকা লেখো : মকরসংক্রান্তি?
➺ নিজের কক্ষতলের সঙ্গে `66\frac{1}{2}`° কোণ করে পৃথিবীর মেরুরেখা নিজের কক্ষপথ ধরে অবিরাম সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে চলেছে। এভাবে পৃথিবীর সূর্য পরিক্রমার সময়, বছরের কয়েকটি বিশেষ দিনে মধ্যাহ্ন সূর্যরশ্মি পর্যায়ক্রমে পৃথিবীর নির্দিষ্ট - কয়েকটি অক্ষরেখার ওপর লম্বভাবে পড়ে। সেই সময় ভূ-পৃষ্ঠের অন্যত্র সূর্যরশ্মি তির্যকভাবে পতিত হয়। ফলে একদিকে যেমন : দিন-রাত্রির হ্রাস-বৃদ্ধি হয়, অন্যদিকে তেমনি তাপমাত্রারও পরিবর্তন ঘটে।
![]() |
২১শে ডিসেম্বর মকরসংক্রান্তি |
২১শে ডিসেম্বর তারিখে পৃথিবীর দক্ষিণ গোলার্ধ সূর্যের সবচেয়ে কাছে আসে এবং সূর্যকিরণ দক্ষিণ গোলার্ধে মকর সংক্রান্তি রেখার ওপর লম্বভাবে পড়ে। ফলে ২১শে ডিসেম্বর তারিখে দক্ষিণ গোলার্ধে দিন সবচেয়ে বড় এবং রাত সবচেয়ে ছোট (১৪ ঘণ্টা দিন ও ১০ ঘণ্টারাত্রি) হয়। ঐদিন উত্তর গোলার্ধে ঠিক বিপরীত অবস্থার সৃষ্টি হয় (অর্থাৎ ১০ ঘন্টা দিন এবং ১৪ ঘন্টা রাত)। ২১শে ডিসেম্বর তারিখ সূর্য দক্ষিণায়ণের শেষ সীমায় মকর সংক্রান্তি রেখায় পৌঁছায়, তাই ২১শে ডিসেম্বর তারিখটিকে মকরসংক্রান্তি বা দক্ষিণ অয়ণান্ত বলে।
৩৬. টীকা লেখো : অপসূর ও অনুসূর?
➺ পৃথিবীর সূর্যের চারদিকে পরিক্রমণের সময় সূর্য ও পৃথিবীর মধ্যে দূরত্ব সর্বদা সমান থাকে না। এর কারণ হল, সূর্য পৃথিবীর উপবৃত্তাকার কক্ষপথের একটি নাভিতে অবস্থিত। ৪ঠা জুলাই সূর্য থেকে পৃথিবীর দূরত্ব সবচেয়ে বেশী (১৫ কোটি ২০ লক্ষ কি. মি.) হয়, একে পৃথিবীর অপসূর অবস্থান বলে। অন্যদিকে ৩রা জানুয়ারী সূর্য থেকে পৃথিবীর দূরত্ব সবচেয়ে কম হয় (১৪ কোটি ৭০ লক্ষ কি. মি.), একে পৃথিবীর অনুসূর অবস্থান বলে। গ্রীষ্মকালে আমাদের পৃথিবী থেকে অপসূর অবস্থানে বেশী দূরত্বের জন্য সূর্যকে ছোট এবং শীতকালে অনুসূর অবস্থানে কম দূরত্বের জন্য সূর্যকে বড় দেখায়। দূরত্বের পার্থক্যের জন্য পৃথিবীর পরিক্রমণের বেগ গ্রীষ্মকালে পরিবর্তিত হয়। শীতকালে আমাদের পৃথিবীর পরিক্রমণের বেগ বাড়ে এবং গ্রীষ্মকালে কমে।
![]() |
পৃথিবীর কক্ষতল, কক্ষপথ এবং অপসূর ও অনুসূর অবস্থান |
৩৭. টীকা লেখো : সুমেরু প্রভা ও কুমেরু প্রভা?
➺ ২১শে মার্চ থেকে ২৩শে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পৃথিবী তার কক্ষপথে এমনভাবে অবস্থান করে যে ছায়াবৃত্ত উত্তর গোলার্ধের সমাক্ষরেখাগুলিকে বেশী করে আলোকিত করে এবং সুমেরু সর্বদাই আলোকিত অংশে থাকে, এর ফলে সুমেরুতে ক্রমাগত ৬ মাস দিন হয়। বিপরীতক্রমে কুমেরু তখন ক্রমাগত ৬ মাস অন্ধকার অংশে থাকে। ফলে সেখানে ক্রমাগত ৬ মাস রাত্রি থাকে। ২৩শে সেপ্টেম্বর থেকে ২১শে মার্চ পর্যন্ত অনুরূপভাবে কুমেরু ক্রমাগত ৬ মাস আলোকিত অংশে থাকে এবং সুমেরু অন্ধকারে থাকে। ফলে সুমেরুতে তখন ক্রমাগত রাত্রি এবং কুমেরুতে ক্রমাগত দিন অনুষ্ঠিত হয়। উভয় মেরু অঞ্চলে এই রকম ৬ মাস ধরে অন্ধকারের সময় মাঝে মাঝে আকাশে রামধনুর মত অস্পষ্ট আলো দেখা যায়। এই আলোকে সুর্যের অঞ্চলে সুমেরু প্রভা এবং কুমেরু অঞ্চলে কুমেরু প্রভা বলে।
৩৮. টীকা লেখো : লিপইয়ার বা অধিবর্ষ?
➺ যে বছর ফেব্রুয়ারী মাসের দিন সংখ্যা ১ দিন বাড়িয়ে (২৮ + ১ = ২৯ দিন করে) বছরটিকে ৩৬৬ দিন করা হয় সেই বছরকে অধিবর্ষ বা লিপ ইয়ার বলা হয়। পৃথিবীর একবার সূর্য পরিক্রমার সময় লাগে ৩৬৫ দিন ৫ ঘণ্টা ৪৮ মিনিট ৪৬ সেকেন্ড বা ৩৬৫ দিন ৬ ঘণ্টা। কিন্তু আমরা ৩৬৫ দিনে এক বছর ধরি। এতে হয়। প্রতি বছর প্রায় ৬ ঘণ্টা সময় বাড়তি থেকে যায়। এইজন্য প্রতি চার বছর অন্তর ফেব্রুযারী মাসে ১ দিন বাড়িয়ে (৪ বছর × ৬ ঘণ্টা = ২৪ ঘণ্টা বা ১ দিন) বাড়তি সময়ের সমতা বজায় রাখা সাধারণভাবে খ্রীষ্টাব্দ সংখ্যাকে ৪ দিয়ে ভাগ করলে যদি কোন ভাগশেষ না থাকে তবে ঐসব বছরকে অধিবর্ষ বা লিপ ইয়ার বলা হয়। এই হিসেবে ২০০৪ সালটি একটি লিপ ইয়ার, কেননা এটি ৪ দিয়ে বিভাজ্য। কিন্তু এইভাবে নির্ণয় করা অধিবর্ষে প্রতি বছর ১১ মিনিট ১৪ সেকেণ্ড সময় বেশী ধরা হয়ে যায়। এই ভুল সংশোধনের জন্য যে ১০০ বছরগুলো ৪০০ দিয়ে বিভাজ্য, অর্থাৎ যে সব শতাব্দী-বছরকে ৪০০ দিয়ে ভাগ করলে কোনো ভাগশেষ থাকে না, শুধুমাত্র সেইসব শতাব্দী-বছরগুলোকেই লিপ ইয়ার হিসেবে ধরা হয়। এই হিসেবে ১৬০০, ২০০০, ২৪০০, ২৮০০ প্রভৃতি শতাব্দী-বছরগুলোকে অধিবর্ষ বা লিপ ইয়ার বলা যাবে, কারণ ৪০০ দিয়ে ভাগ করলে এদের কোনো ভাগশেষ থাকে না। কিন্তু ১৭০০, ১৮০০, ১৯০০ অথবা ২১০০ শতাব্দী- বছরগুলোকে লিপ ইয়ার বলা যাবে না কারণ ৪০০ দিয়ে এদের প্রত্যেকটিকে ভাগ করলে ভাগশেষ থেকে যাবে।
৩৯. টীকা লেখো : ফেরেল সূত্র?
➺ পৃথিবী নিজের অক্ষের ওপর পশ্চিম দিক থেকে পূর্ব দিকে সবসময় আবর্তন করছে, কিন্তু নিজের অভিগত গোলাকৃতির জন্য এই আবর্তনের বেগ পৃথিবীর সর্বত্র সমান নয়। নিরক্ষরেখা থেকে দুই মেরুর দিকে আবর্তনের গতিবেগ ক্রমশ কমতে থাকে। এছাড়া ভূ-পৃষ্ঠের সঙ্গে ঘর্ষণের ফলে ভূ-পৃষ্ঠ সংলগ্ন বায়ু ওপরের বায়ু থেকে কিছুটা পিছিয়ে পড়ে। এই সব কারণের জন্য পৃথিবীর বায়ুপ্রবাহ বা সমুদ্রস্রোতের গতির দিক সরাসরি উত্তর-দক্ষিণে না হয়ে উত্তর গোলার্ধে ডান দিকে এবং দক্ষিণ গোলার্ধে বাঁ দিকে সামান্য বেঁকে যায়। বিজ্ঞানী ফেরেল এই গতিবিক্ষেপের নিয়মটি আবিষ্কার করেছিলেন বলে এই সূত্রটি ‘ফেরেল সূত্র’নামে পরিচিত। ফেরেলের সূত্র অনুসারে, পৃথিবী স্থির থাকলে পৃথিবীর নিরক্ষীয়
শান্ত বলয়ের দিকে প্রবাহিত যে বায়ু দক্ষিণ গোলার্ধে দক্ষিণ থেকে উত্তর দিকে সোজাসুজি প্রবাহিত হত, তা পৃথিবীর আবর্তনের জন্য খানিকটা বাঁ দিকে বেঁকে দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে প্রবাহিত হয়, যা দক্ষিণ-পূর্ব আয়ন বায়ু নামে পরিচিত। দক্ষিণ-পূর্ব আয়নবায়ু নিরক্ষরেখা অতিক্রম করার পর উত্তর গোলার্ধে ডান দিকে বেঁকে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ু হিসাবে প্রবাহিত হয়।
৪০. টীকা লেখো : মহাবিষুব?
➺ 'বিষুব' কথাটির অর্থ ‘সমান দিনরাত্রি।” যে দিন পৃথিবীর সমস্ত জায়গায় দিন-রাত সমান হয়, সেই দিনকে 'বিষুব' বলে। ২১শে মার্চ ২৩শে সেপ্টেম্বর দিন দুটিতে পৃথিবীর সমস্ত অক্ষরেখায় দিনরাত্রি সমান হয়, (দিন-রাত = ১২ ঘন্টা)। সূর্য প্রদক্ষিণের সময় পৃথিবীর মেরুরেখা নিজের কক্ষতলের সঙ্গে `66\frac{1}{2}`° কোণ করে অবস্থান করায় ২১শে মার্চ ও ২৩শে সেপ্টেম্বর, বছরের এই দুটি বিশেষ দিনে সূর্য নিরক্ষরেখার ঠিক মাথার ওপর থাকে এবং সূর্যরশ্মি নিরক্ষরেখার ওপর ঠিক লম্বভাবে পড়ে। এর ফলে এই দুই দিন সূর্য থেকে উত্তর মেরু ও দক্ষিণ মেরুদ্বয় সমান দূরত্বে অবস্থান করে। সেই জন্য ২১শে মার্চ ও ২৩শে সেপ্টেম্বর তারিখে পৃথিবীর সমস্ত স্থানে দিন রাতের দৈর্ঘ্য সমান হয় (অর্থাৎ ১২ ঘন্টা দিন ও ১২ ঘন্টা রাত)। এই দুটি পৃথিবীর আলোকিত অর্ধাংশ পৃথিবীর দুই মেরুকে স্পর্শ করে। এছাড়া এই দুই দিন সূর্য পৃথিবীর ঠিক পূর্ব আকাশে ওঠে এবং পশ্চিম আকাশে অস্ত যায়। ২১শে মার্চ উত্তর গোলার্ধে বসন্তকাল বলে ঐ তারিখটিকে বসন্তকালীন বিষুব বা মহাবিষুব বলা হয়।
২। পৃথিবীর আবর্তন, পরিক্রমণ ও তার ফল
৩। পৃথিবীর কোন স্থানের অবস্থান নির্ণয়
৪। শিলা
৫। পর্বত, মালভূমি ও সমভূমি
৬। ভূমিকম্প
৭। আবহবিকার বা বিচূর্ণীভবন
৮। নদী, হিমবাহ ও বায়ুর কাজ
পৃথিবীর পরিক্রমণ গতি,ভূগোল পৃথিবীর পরিক্রমণ,পৃথিবীর আবর্তন,পৃথিবীর পরিক্রম,পৃথিবীর পরিক্রমণ 3d video,পৃথিবীর আবর্তন গতি,সপ্তম শ্রেণী ভূগোল পৃথিবীর পরিক্রমণ,পৃথিবীর আবর্তন গতিবেগ,আবর্তন গতিও পরিক্রমণ গতি,পৃথিবীর গতিসমূহ,পরিক্রমণ গতি,পৃথিবীর আহ্নিক ও বার্ষিক গতির স্পীড কত কিলোমিটার,আবর্তন ও আহ্নিক গতি,পৃথিবীর গতি কত