১. সৌরজগতের অর্থ কি?
❏ সূর্যের আকর্ষণে আমাদের পৃথিবীর মত অনেক ছোটবড় জ্যোতিষ্ক, যারা সূর্যের চারিদিকে ঘুরছে, তাদের একসঙ্গে সৌরজগৎ, সৌর পরিবার বা সূর্যের পরিবার বলা হয়। সূর্য এই পরিবারের কর্তা। পৃথিবীসহ ৯টি গ্রহ ও তাদের বিভিন্ন উপগ্রহ, অসংখ্য গ্রহাণুপুঞ্জ, ধূমকেতু ও উল্কা সৌরজগতের অন্তর্গত।
![]() |
সৌর জগতের বিভিন্ন গ্রহ ও তাদের উপগ্রহ |
২. সৌরজগৎ বলতে কি বুঝায়?
❏ সৌরজগতের কেন্দ্রস্থলে রয়েছে সূর্য। সূর্যের চারিদিকে ঘুরছে পৃথিবীসহ নয়টি গ্রহ, যথা : বুধ, শুক্র, পৃথিবী, মঙ্গল, বৃহস্পতি, শনি, ইউরেনাস, নেপচুন ও প্লুটো। কোন কোন গ্রহের চতুর্দিকে পরিক্রমণ করে এক বা একাধিক উপগ্রহ। গ্রহগুলি উপগ্রহ সমেত সূর্যের চতুর্দিকে পরিক্রমণ করে। গ্রহ ও উপগ্রহ ছাড়া সৌরজগতের অন্তর্ভূত রয়েছে অসংখ্য গ্রহাণুপুঞ্জ, ধূমকেতু এবং উল্কা। এগুলিও নিজের নিজের কক্ষপথে সূর্যকে পরিক্রমণ করে। দূরত্ব অনুসারে বুধ সূর্যের নিকটতম ও প্লুটো দূরতম ভাই।
৩. মহাশূন্য বা মহাকাশ থেকে পৃথিবীকে কেমন দেখায়?
➺ মহাশূন্য বা মহাকাশ থেকে পৃথিবীকে গোলাকার দেখায়।
৪. পৃথিবীর প্রকৃত আকৃতি কেমন? পৃথিবীর গোলাকার আকৃতির ২টি প্রত্যক্ষ প্রমাণ দাও।
➺ পৃথিবীর আকৃতি অভিগত গোলকের মত।
❏ পৃথিবীর আকৃতি যে গোলাকার তা দুটি প্রত্যক্ষ প্রমাণের সাহায্যে বোঝা যায়— ① মহাকাশ বা চন্দ্রপৃষ্ঠে অভিযানকারীদের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা : পৃথিবীর সর্বপ্রথম সফল মহাকাশচারী ইউরী গ্যাগারিন ১৯৬১ সালের ১২ই এপ্রিল স্পুটনিকে চড়ে পৃথিবী প্রদক্ষিণের সময় দেখেন যে পৃথিবীকে দেখতে গোলাকার বটে, তবে তা অনেকটা পেয়ারার মত। এছাড়া তাঁর তোলা পৃথিবীর ছবিও দেখতে গোলাকৃতি বা মণ্ডলাকার।
![]() |
মহাকাশ থেকে দেখা গোলাকার পৃথিবী ও চন্দ্রপৃষ্ঠ |
② এরপর ১৯৬৯ খ্রীষ্টাব্দের ১৬ই জুলাই মানুষ সর্বপ্রথম চন্দ্রপৃষ্ঠে নামতে সক্ষম হয়। চন্দ্রপৃষ্ঠ থেকে ঐদিন পৃথিবীর দুই মহাকাশচারী নীল আর্মস্ট্রং ও এডউইন অ্যালড্রিন ৩ লক্ষ ৪৪ হাজার ৪শ' কিলোমিটার দূর থেকে ঘোর কালো মহাকাশের পটভূমিতে পৃথিবীকে দেখেন—পৃথিবীকে সেখান থেকে দেখতে লাগছিল সাদা ও ফিকে নীল রঙের একটা মণ্ডলের মতন। তবে আকৃতিতে তা পৃথিবী থেকে দেখা চাঁদের আকৃতির চেয়ে অনেক বড় । এরপর বিশ্বের প্রথম মহিলা মহাকাশচারিণী ভ্যালেন্তিনা তেরেস্কোভা এবং ভারতের প্রথম মহাকাশচারী রাকেশ শর্মা মহাকাশ থেকে পৃথিবীর একই রকম গোলীয় আকৃতি দেখেন।
৫. পৃথিবীর আকৃতি কি নিখুঁত গোলক না অভিগত গোলক? কিভাবে তা প্রমাণ করবে?
❏ বিভিন্ন পরীক্ষা থেকে জানা যায় যে, পৃথিবীর আকার ঠিক গোলাকার নয়, বরং পৃথিবীর উত্তর ও দক্ষিণ মেরু কিছুটা চাপা এবং মধ্যের নিরক্ষীয় অঞ্চল কিছুটা স্ফীত। সুতরাং বলা যায় যে পৃথিবীর আকৃতি অনেকটা অভিগত গোলকের মত।
❏ পৃথিবীর অভিগত গোলত্বের প্রমাণ : পর পৃষ্ঠার পরীক্ষা প্রমাণ করে যে পৃথিবী একটি অভিগত গোলক। পৃথিবীর নিরক্ষীয় ব্যাস (১২,৭৫৭ কিলোমিটার) এবং মেরুব্যাসের (১২,৭১৪ কিলোমিটার) মধ্যে প্রায় ৪৩ কিলোমিটার পার্থক্য (১২,৭৫৭ - ১২,৭১৪ = ৪৩) বর্তমান। পৃথিবী একটি নিখুঁষ্ট গোলক হলে দুটি ব্যাস দু'রকম হত না।
৬. “পৃথিবীর আকৃতি পৃথিবীর মত”—প্রমাণ কর।
➺ পৃথিবীর জন্মমুহূর্তে (অর্থাৎ পৃথিবী যখন জ্বলন্ত সূর্য থেকে বিচ্ছিন্ন হল) পৃথিবীর আকৃতি ছিল গোলাকার। কিন্তু শিশু অবস্থায় (যখন পৃথিবী উত্তপ্ত ও নমনীয় ছিল) নিজের অক্ষে ক্রমাগত আবর্তনের ফলে পৃথিবীর মধ্যাংশে যে কেন্দ্রবিমুখ শক্তির উদ্ভব হয়, তার ফলে পৃথিবীর মধ্যাংশ অর্থাৎ নিরক্ষীয় অঞ্চল একটু ফুলে উঠে স্ফীত হয় এবং পৃথিবী অভিগত গোলকের (অর্থাৎ যে গোলকের উত্তর ও দক্ষিণ দিক সামান্য চাপা এবং পূর্ব ও পশ্চিম দিক সামান্য স্ফীত) আকৃতি প্রাপ্ত হয়।
কিন্তু পৃথিবীকে যে একটি আদর্শ অভিগত গোলক বলা যায় না তার কারণ : ① সমুদ্রতল, পাহাড়-পর্বত এবং মালভূমি ভূ-পৃষ্ঠকে উঁচু-নীচু, ঢেউ খেলানো এবং বন্ধুর রূপ দান করেছে। হিমালয় পর্বতের মাউন্ট এভারেস্ট (উচ্চতা ৮,৮৫৮ মিটার) হল পৃথিবীর উচ্চতম অঞ্চল, আর প্রশান্ত মহাসাগরের গভীর সমুদ্রতলে অবস্থিত মারিয়ানা খাত (গভীরতা ১১,০০০ মিটারেরও বেশী)হল পৃথিবীর নিম্নতম অঞ্চল,অর্থাৎ পৃথিবীর বন্ধুরতার পরিমাণ হল প্রায় ২০ কিলোমিটার অর্থাৎ পৃথিবীপৃষ্ঠ যথেষ্ট বন্ধুর।
![]() |
পৃথিবীর বিশিষ্ট আকৃতি : টানা রেখা পৃথিবীর ন্যাশপাতির মত আকৃতি এবং ভাঙা রেখা আদর্শ অভিগত গোলাকৃতি বোঝাচ্ছে। |
② পৃথিবী থেকে সম্প্রতি যে সব কৃত্রিম উপগ্রহ পাঠানো হয়েছে তাদের শ্যেন দৃষ্টিতে ধরা পড়েছে যে— (ক) পৃথিবীর শুধুমাত্র দক্ষিণ মেরুই চাপা, উত্তর মেরু চাপা নয়, (খ) দক্ষিণ মেরু ২০ মিটার অতি নীচু এবং উত্তর মেরু ২০ মিটার অতি উঁচু; [গ] দক্ষিণ গোলার্ধের মধ্য অক্ষাংশ ৮ মিটার ফুলে উঠেছে, আর উত্তর গোলার্ধের মধ্য অক্ষাংশ ৮ মিটার বসে গিয়েছে। অর্থাৎ, পৃথিবীর আকৃতি অনেকটা ন্যাসপাতির মত। পৃথিবীর এই বিশিষ্ট আকৃতিটি আমাদের পরিচিত কোন বস্তুর সঙ্গে সঠিকভাবে তুলনীয় নয়। তাই বলা হয় যে, পৃথিবীর আকৃতি পৃথিবীর মতই ।
৭. এরাটস্থনিস পৃথিবীর ব্যাসার্ধ কত নির্ণয় করেছিলেন?
➺ এরাটস্থনিসের হিসেব অনুসারে পৃথিবীর পরিধি ছিল 46,250 কিলোমিটার।
এখন, গোলাকার পৃথিবীর পরিধি = 46,250 কি.মি.
= 2𝝅R (𝝅 = `\frac{22}7` , R = ব্যাসার্ধ)
অথবা, `2\times\frac{22}7\times R`
অথবা, 46,250 = `\frac{44\times R}7`
∴ R = `\frac{46,350\times7}{44}` = 7,358 কি.মি. (প্রায়)।
![]() |
পৃথিবীর পরিধি নির্ণয়ে এরাটস্থনিস এর প্রমাণ |
প্রাকৃতিক ভূগোল
১। পৃথিবীর আকৃতি ও আয়তন
২। পৃথিবীর আবর্তন, পরিক্রমণ ও তার ফল
৩। পৃথিবীর কোন স্থানের অবস্থান নির্ণয়
৪। শিলা
৫। পর্বত, মালভূমি ও সমভূমি
৬। ভূমিকম্প
৭। আবহবিকার বা বিচূর্ণীভবন
৮। নদী, হিমবাহ ও বায়ুর কাজ
𒀭 সূর্যের নিকটতম ও দূরতম গ্রহের নাম কি?
➺ বুধ সূর্যের নিকটতম গ্রহ এবং প্লুটো দূরতম গ্রহ।
𒀭 পৃথিবীর পরিধি কি ভাবে নির্ণয় করা যায়?
➺ ভূ-পৃষ্ঠে যে কোন দুই স্থানের দূরত্ব ও মধ্যাহ্ন সূর্যরশ্মির শিরোবিন্দু থেকে অবনতির পার্থক্য দেখে পৃথিবীর পরিধি নির্ণয় করা যায়।
𒀭 সমুদ্রতল থেকে পৃথিবীর স্থলভাগের সর্বাধিক উচ্চতা এবং জলভাগের সর্বাধিক গভীরতা কত? পৃথিবীর বন্ধুরতার পরিমাণ কত?
➺ হিমালয় পর্বতের মাউন্ট এভারেস্ট হল পৃথিবীর স্থলভাগের সর্বোচ্চ অঞ্চল (উচ্চতা ৮,৮৪৮ মিটার)। প্রশান্ত মহাসাগরের মারিয়ানা খাত পৃথিবীর জলভাগের গভীরতম অঞ্চল (গভীরতা ১১,০০০ মিটারেরও বেশী)। পৃথিবীর বন্ধুরতার পরিমাণ প্রায় ২০ কিলোমিটার ।
𒀭 একই সময়ে পৃথিবীতে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত হয় না কেন?
➺ পৃথিবীর আকৃতি গোলাকার বলে একই সময়ে পৃথিবীর সর্বত্র সূর্যের আলো পড়ে না। পৃথিবীর একদিক যখন আলোকিত হয়, তখন অন্যদিক অন্ধকার থাকে। স্বভাবতই বিভিন্ন স্থানে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত বিভিন্ন সময়ে ঘটে থাকে। পৃথিবী সমতল হলে একই সময়ে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত হত।
𒀭 চন্দ্রগ্রহণের সময় চাঁদের ওপর পতিত পৃথিবীর ছায়া গোলাকার দেখায় কেন?
➺ গোলাকার বস্তুর ছায়া গোলাকারই হয়। যেহেতু পৃথিবী গোলাকার, সেহেতু চন্দ্রগ্রহণের সময় চাঁদের ওপর পতিত পৃথিবীর ছায়া গোলাকার দেখায়
𒀭 পৃথিবীর নিরক্ষীয় ব্যাস কত?
➺ পৃথিবীর নিরক্ষীয় ব্যাস ১২,৭৫৭ কিলোমিটার।
𒀭 পৃথিবীর ওজন কত?
➺ পৃথিবীর ওজন হল ৫,৬৯৭ × ১০১৮ টন।
𒀭 পৃথিবীর গড় পরিধি কত?
➺ পৃথিবীর গড় পরিধি ৪০,০০০ কিলোমিটার।
𒀭 পৃথিবীর নিরক্ষীয় ও মেরুদেশীয় ব্যাসের মধ্যে পার্থক্য কত?
➺ পৃথিবীর নিরক্ষীয় ও মেরুদেশীয় ব্যাসের মধ্যে পার্থক্য হল ৪৩ কিলোমিটার।
𒀭 পৃথিবীর গড় ব্যাসার্ধ কত কিলোমিটার?
➺ পৃথিবীর গড় ব্যাস ১২,৭৩৪.৫ কি.মি. হলেও গণনার সুবিধার জন্য একে বাড়িয়ে ১২,৮০০ কি.মি. ধরা হয়। এই হিসেবে পৃথিবীর গড় ব্যাসার্ধ হল। এই হিসেবে পৃথিবীর গড় ব্যাসার্ধ হলো = ৬,৪০০ কি.মি.।