ভারতের জনসংখ্যা Indian Economy WBCS Study Notes

Esita Afrose
0
 

1871 সালে ভারতে প্রথম জনসংখ্যা গণনা প্রচলিত হয়। প্রতি 10 বছর অন্তর এই জনসংখ্যা গণনা করা হয়। সর্বশেষ জনগণনা হয় 2011 সালে। এটি পঞ্চদশতম জনগণনা। 2011 সালের জনগণনায় প্রথমবার জনগণের বায়োমেট্রিক ইনফরমেশন সংগ্রহ করা হয়। এই জনগণনার সময় রেজিস্ট্রার জেনারেল এবং সেনসাস কমিশনার পদে ছিলেন শ্রী সি এম চন্দ্রমৌলি। এই জনগণনার স্লোগান ছিল “আমাদের জনগণনা, আমাদের ভবিষ্যৎ” (Our census, our future)। জনসংখ্যা অনুযায়ী ভারতের স্থান বিশ্বে দ্বিতীয়। প্রথম স্থানে আছে চিন। 2021 সালে ভারতের 16 তম জনগণনা হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু কোভিড অতিমারি পরিস্থিতির কারণে এই পদ্ধতি বিলম্বিত হয়েছে।

❐ জাতীয় জনসংখ্যা নীতি 2000 : নতুন সহস্রাব্দে, 2000 সালে ভারতীয় জনগণের শিশুস্বাস্থ্য ও প্রজনন-সংক্রান্ত প্রয়োজন মেটানোর উদ্দেশ্যে আগামী দশকে গ্রহণীয় পদক্ষেপ ও লক্ষ্যগুলির রূপরেখা পরিকল্পিত ও প্রকাশিত হয়। এর ফলে ‘ভারতের জাতীয় জনসংখ্যা নীতি 2000' ঘোষিত হয়। যে যে ক্ষেত্র বা বিষয়কে 'জাতীয় জনসংখ্যা নীতি 2000'-এ অগ্রাধিকার প্রদান করে প্রাথমিক লক্ষ্যরূপে (immediate objectiveউল্লেখ করা হয়েছে সেগুলি হল—জন্মনিয়ন্ত্রণ, স্বাস্থ্য পরিকাঠামো এবং প্রজনন ও শিশুস্বাস্থ্য-সংক্রান্ত মৌলিক সুযোগসুবিধা ও পরিসেবার সর্বজনীন সহজপ্রাপ্তি নিশ্চিতকরণ।

এই নীতিতে নির্ধারিত দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য (long-term objectiveহল – 2045 সালের মধ্যে স্থিতিশীল জনসংখ্যা (stable populationঅর্জন করা। জাতীয় জনসংখ্যা নীতি 2000-এ বর্ণিত লক্ষ্য অর্জনে 14টি সোশিও- ডেমোগ্রাফিক টার্গেট নির্ধারণ করা হয়। তার মধ্যে অন্যতম কয়েকটি টার্গেট হল—  ① স্কুলশিক্ষা আবশ্যিকীকরণ এবং স্কুলছুট বা ‘স্কুল ড্রপ আউট’-এর সংখ্যা হ্রাস। ② শিশুমৃত্যুর হার (infant mortality rate) প্রতি 1000 জন্মপিছু 30- এ নামানো। ③  প্রসূতিমৃত্যুর হার (maternal mortality rateপ্রতি 1 লক্ষ প্রসবপিছু 100-র নীচে নিয়ে যাওয়া। ④ মহিলাদের দেরিতে বিবাহে উৎসাহ প্রদান। ⑤ চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের তত্ত্বাবধানে শিশু জন্মহারের 80% লক্ষ্যমাত্রা অর্জন। ⑥ সংক্রামক ব্যাধি নিয়ন্ত্রণ ও নিরোধ। ➆ পরিবার পরিকল্পনায় সর্বজনীন সচেতনতা অর্জন।

 জাতীয় জনসংখ্যা নীতিতে জন্ম নিয়ন্ত্রণ ও পরিবার পরিকল্পনার ক্ষেত্রে কয়েকটি বিশেষ পদক্ষেপ গৃহীত হয়েছে— ① যে যে পঞ্চায়েত এবং জেলা পরিষদ ক্ষুদ্র পরিবার পরিকল্পনা রূপায়ণে উল্লেখযোগ্য সাফল্য লাভ করবে, তাদের পুরস্কার প্রদান। ② যে যে পরিবার দ্বি-সন্তান নীতি গ্রহণ করবে তাদের বিশেষ সুযোগসুবিধা প্রদান। ③ দারিদ্র্যসীমার নীচে বসবাসকারী কোনো দম্পতির সন্তান সংখ্যা 2 বা তার কম হলে এবং তাদের একজন বন্ধ্যাত্বকরণে রাজি হলে যে-কোনো বন্ধ্যাত্বকরণের পর স্বামী-স্ত্রী উভয়ের জন্য বিনামূল্যে স্বাস্থ্যবিমা প্রাপ্তির সুবিধা প্রদান । ④ জনগণের জন্য নিরাপদ গর্ভপাতের সুবিধার সহজপ্রাপ্তি সুনিশ্চিতকরণ।

❐ জনসংখ্যা লভ্যাংশ (Demographic Dividend): জনসংখ্যা লভ্যাংশ নির্দেশ করে দেশের মোট কর্মক্ষম (15-64 বছর বয়সি) জনসংখ্যার অংশকে অর্থাৎ দেশের মোট জনসংখ্যায় যখন কর্মক্ষম জনসংখ্যা (15-64 বছর বয়সি)-র অংশ অকর্মক্ষম জনসংখ্যা ( 14 বছরের কমবয়সি বা 65 বছরের বেশ বয়সি)-র তুলনায় বেশি হয় তা প্রকাশ করা হয় জনসংখ্যা লভ্যাংশ-র মাধ্যমে। কোনো দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি (Economic Growthপরিমাপে জনসংখ্যা লভ্যাংশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করে।

❐ দেশের অর্থনৈতিক উন্নতিতে জনসংখ্যা লভ্যাংশের ভূমিকা: দেশের কর্মক্ষম জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে দেশটির অর্থনৈতিক উন্নতি ঘটে। ন্যাশনাল স্যাম্পেল সার্ভে অফিস (NSSO)-এর একটি সাম্প্রতিক রিপোর্ট অনুযায়ী ভারতে লেবার ফোর্স পার্টিসিপেশন রেট (কর্মক্ষম জনসংখ্যা)  বর্তমানে হ্রাস পাচ্ছে [2004-05 - 63.7%, 2011-12-55.9%; 2017- 18-49.8%] এবং 60 ঊর্ধ্ব জনসংখ্যা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে।

❐ নির্ভরশীল অনুপাত (Dependency Ratio): দেশের নির্ভরশীল জনসংখ্যা (কর্মক্ষম জনসংখ্যার ওপর) ও কর্মক্ষম জনসংখ্যার অনুপাতকে নির্ভরশীল অনুপাত বলা হয়। এর মানের হ্রাস দেশের উন্নতির নির্দেশক।  জনসংখ্যা লভ্যাংশ-র মান বৃদ্ধির মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক উন্নতিসাধন করার জন্য ভারত সরকার কিছু প্রকল্প (যুব সম্প্রদায়কে প্রশিক্ষণ প্রদান ও তাদের কাজের সুযোগ বৃদ্ধির জন্য) গ্রহণ করেছে, যেমন— দীনদয়াল উপাধ্যায় গ্রামীণ কৌশল্য যোজনা, মহাত্মা গান্ধি ন্যাশনাল রুরাল এমপ্লয়মেন্ট গ্যারান্টি স্কিম (MGNREGS), প্রধানমন্ত্রী কৌশল বিকাশ যোজনা ইত্যাদি।


জনগণনা 2011
জনসংখ্যাপুরুষদের সংখ্যা: প্রায় 62.37 কোটি
মহিলাদের সংখ্যা: প্রায় 58.65 কোটি
মোট জনসংখ্যা: প্রায় 121 কোটি [2022 সালের হিসাব অনুযায়ী ভারতের জনসংখ্যা প্রায় 141 কোটি]
সাক্ষরতাসাক্ষরতার হার: 74.04%
পুরুষদের সাক্ষরতার হার: 82.14%
মহিলাদের সাক্ষরতার হার: 65.46%
জনঘনত্বপ্রতি বর্গকিমিতে 382 জন
লিঙ্গানুপাতপ্রতি 1000 জন পুরুষে 943 জন মহিলা [ সম্প্রতি প্রকাশিত একটি রিপোর্ট অনুযায়ী লিঙ্গানুপাত প্রতি 1000 জন পুরুষ পিছু 1020 জন মহিলা]
গত দশকে জনসংখ্যা বৃদ্ধির পরিমাণ17.64%
বিশ্ব জনসংখ্যায় ভারতের অবদান17.4%
সাক্ষরতা বৃদ্ধির হার14.19%


❐ ভারতের জনবিন্যাস সম্পর্কিত কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য (2011 জনগণনা অনুযায়ী) : সাক্ষরতার নিরিখে রাজ্যগুলির মধ্যে- ① প্রথম স্থানে আছে কেরল (93.9%), ② দ্বিতীয় স্থানে আছে মিজোরাম (91.33%) এবং
③ সর্বনিম্ন স্থানে আছে বিহার (61.8%)। ভারতে রাজ্যগুলির মধ্যে জনঘনত্বে- ① প্রথম স্থানে আছে বিহার (প্রতি বর্গকিমিতে 1,102 জন ), ② দ্বিতীয় স্থানে আছে পশ্চিমবঙ্গ (প্রতি বর্গকিমিতে 1,029 জন) এবং ③ সর্বনিম্ন স্থানে আছে অরুণাচল প্রদেশ (প্রতি বর্গকিমিতে 17 জন)। কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলির মধ্যে জনঘনত্বে ① প্রথম স্থানে আছে দিল্লি (প্রতি বর্গকিমিতে 11,297 জন) এবং ② জনঘনত্ব সর্বনিম্ন আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ (প্রতি বর্গকিমিতে 46 জন)। ভারতের রাজ্যগুলির মধ্যে সর্বাধিক লিঙ্গানুপাত কেরল-এ (প্রতি 1000 জন পুরুষে 1,084 জন মহিলা) এবং সর্বনিম্ন লিঙ্গানুপাত হরিয়ানা-তে (1000 জন পুরুষে 877 জন মহিলা)। কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলির মধ্যে লিঙ্গানুপাত সর্বোচ্চ পুদুচেরি-তে (প্রতি 1000 জন পুরুষে 1,038 জন মহিলা) এবং সর্বনিম্ন লিঙ্গানুপাত দমন ও দিউ-তে (1000 জন পুরুষে 618 জন মহিলা)।

অঙ্গরাজ্য হিসেবে জনসংখ্যা (Population) ① সর্বাধিক উত্তর প্রদেশ-এ, ② দ্বিতীয় স্থানে আছে মহারাষ্ট্র। জনসংখ্যা সর্বনিম্ন সিকিম-এ। কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হিসেবে জনসংখ্যা (Population) সর্বাধিক দিল্লি-তে এবং সবচেয়ে কম লাক্ষাদ্বীপ-এ। মহিলাদের সাক্ষরতার হারের নিরিখে প্রথম স্থানে রয়েছে কেরল (92.07%) এবং সর্বশেষ স্থানে রয়েছে বিহার (51.50%)। জনসংখ্যার বিচারে সবচেয়ে জনবহুল জেলা—মহারাষ্ট্রের থানে (থানে বিভাজিত হওয়ার পর সবচেয়ে জনবহুল জেলা পশ্চিমবঙ্গের উত্তর 24 পরগনা) ৷ সবচেয়ে জনবিরল জেলা— অরুণাচল প্রদেশের ডিবং ভ্যালি। জনঘনত্বের নিরিখেও ডিবং ভ্যালি সবচেয়ে কম জনঘনত্ববিশিষ্ট জেলা।

লিঙ্গানুপাতের নিরিখে সর্বাধিক লিঙ্গানুপাতবিশিষ্ট জেলা—মাহে (পুদুচেরি) এবং সর্বনিম্ন লিঙ্গানুপাতবিশিষ্ট জেলা—দমন (দমন ও দিউ)। সর্বোচ্চ সাক্ষরতার হারবিশিষ্ট জেলা—মিজোরামের সরচিপ্ এবং সর্বনিম্ন সাক্ষরতার হার বিশিষ্ট জেলা—মধ্যপ্রদেশের আলিরাজপুর। শিশুদের (0-6 বছর বয়সি) মধ্যে সর্বাধিক লিঙ্গানুপাতবিশিষ্ট রাজ্য মিজোরাম এবং সর্বনিম্ন লিঙ্গানুপাতবিশিষ্ট রাজ্য হরিয়ানা। জনসংখ্যার বিচারে উত্তরপ্রদেশে তফশিলি জাতির লোকসংখ্যা সর্বাধিক, দ্বিতীয় স্থানে আছে পশ্চিমবঙ্গ এবং সর্বনিম্ন মিজোরামে । রাজ্য হিসেবে জনসংখ্যার বিচারে মধ্যপ্রদেশে তফশিলি উপজাতির লোকসংখ্যা সর্বাধিক এবং সর্বনিম্ন গোয়াতে। রাজ্য হিসেবে শতকরা হারের নিরিখে (ভারতের মোট জনসংখ্যা সাপেক্ষে) মিজোরামে তফশিলি উপজাতির শতকরা হার সর্বাধিক এবং সর্বনিম্ন উত্তরপ্রদেশে।

❐ 2011 আদমশুমারি পশ্চিমবঙ্গ : মোট জনসংখ্যা— প্রায় 9.13 কোটি (ভারতের মোট জনসংখ্যার প্রায় 7.54%); পুরুষ সংখ্যা প্রায় 4.69 কোটি; নারীর সংখ্যা—প্রায় 4.44 কোটি। জনঘনত্ব —1029 জন (প্রতি বর্গকিমিতে), ভারতে দ্বিতীয় স্থানাধিকারী। সাক্ষরতার হার – 77.08%; পুরুষ সাক্ষরতার হার—82.67%; নারী সাক্ষরতার হার—71.16% । লিঙ্গানুপাত—947 (প্রতি 1000 জন পুরুষ পিছু নারী সংখ্যা); শিশু (0-6 বছর বয়সি) লিঙ্গানুপাত – 950 (প্রতি 1000 জন পুত্র শিশু পিছু কন্যা শিশু সংখ্যা)

জেলাভিত্তিক সাক্ষরতার হারের ক্রম— ① পূর্ব মেদিনীপুর (87.66%;প্রথম), ② কলকাতা (87.14%; দ্বিতীয়) ③ উত্তর ২৪ পরগনা (84.95%; তৃতীয়) ④ উত্তর দিনাজপুর (60.13%; সর্বনিম্ন)। জেলাভিত্তিক লিঙ্গানুপাতের প্রতি 1000 জন পুরুষে নারীসংখ্যা ক্রম— ① দার্জিলিং (971; প্ৰথম), ② পশ্চিম মেদিনীপুর (960; দ্বিতীয়), ③ কলকাতা (899; সর্বনিম্ন)।

জেলাভিত্তিক জনঘনত্বের ক্রম— ① কলকাতা (প্রথম), ② হাওড়া (দ্বিতীয়), ③ উত্তর ২৪ পরগনা (তৃতীয়), ④ পুরুলিয়া (সর্বনিম্ন)। নারী সাক্ষরতার হারে প্রথম কলকাতা (84.06%), সর্বশেষ স্থানাধিকারী পুরুলিয়া । তফশিলি জাতি (SC)-ভুক্তদের জনসংখ্যা সর্বাধিক দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলায় এবং শতকরা হার সর্বাধিক কোচবিহার জেলায়। তফশিলি উপজাতি (SC) ভুক্তদের জনসংখ্যা সর্বাধিক পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় এবং শতকরা হার সর্বাধিক জলপাইগুড়ি জেলায়। সর্বাধিক জনসংখ্যা বৃদ্ধির হারযুক্ত জেলা—উত্তর দিনাজপুর।

❐ জনসংখ্যার ভিত্তিতে ভারতের শহর :
নগর— 1 লক্ষের বেশি জনসংখ্যাবিশিষ্ট শহর। মহানগর বা মেট্রোপলিস — 10 লক্ষের বেশি জনসংখ্যাবিশিষ্ট শহর। মেগাসিটি— 1 কোটির বেশি জনসংখ্যাবিশিষ্ট শহর। বর্তমানে ভারতে 5 টি মেগাসিটি রয়েছে—মুম্বই (বৃহত্তম), দিল্লি, কলকাতা, চেন্নাই, বেঙ্গালুরু।

❐ মানব উন্নয়ন রিপোর্ট : মানব উন্নয়নের বিষয়ে ধারণা দেওয়ার উদ্দেশ্যে 1990 সাল থেকে ইউনাইটেড নেশনস্ ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম (UNDP) মানব উন্নয়ন রিপোর্ট (Human Development Report-HDR) প্রকাশ করে। পাকিস্তানের অর্থনীতিবিদ মেহবুব উল হক্ এবং ভারতীয় নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন রিপোর্টটি প্রথমবার চালু করেন। মানব উন্নয়ন রিপোর্ট (HDR)-এ 4টি সূচক অন্তর্ভুক্ত থাকে, এগুলি হল – ① বৈষম্য সমন্বয়কৃত মানব উন্নয়ন সূচক (Inequality Adjusted Human Development Index-IHDI), ② লিঙ্গ উন্নয়ন সূচক (Gender Development Index – GDI), ③ লিঙ্গ বৈষম্য সূচক (Gender Inequality Index - GII), ④ বহুমাত্রিক দারিদ্র্য সূচক (Multidimensional Poverty Index - MPI)।

❐ মানব উন্নয়নের বিভিন্ন সূচক :
✸ মানব উন্নয়ন সূচক (Human Development Index—HDI):  এটি একটি যৌগিক বা কম্পোসিট পরিমাপ। যে যে নির্দেশকগুলির ওপর ভিত্তি করে এই সূচক নির্ধারণ করা হয়, সেগুলি হল— 
① প্রত্যাশিত আয়ুষ্কাল সূচক (Life Expectancy Index – LEI) : আয়ুষ্কালের পরিমাপ করা হয় জন্মকালে জীবনকালের প্রত্যাশার ওপর ভিত্তি করে, সুস্থ ও দীর্ঘ আয়ুষ্কাল এই সূচকের উন্নত মান সূচিত করে ।

② শিক্ষাগত সাফল্য সূচক (Educational Attainment Index—EAI): শিক্ষাগত সাফল্য নির্ণয় করা হয় প্রাপ্তবয়স্ক সাক্ষরতা ও বিদ্যালয়ে ভরতির হারের মান নির্ণয়ের মাধ্যমে । শিক্ষাগত সাফল্য সূচক = 3 প্রাপ্তবয়স্ক সাক্ষরতা সূচক + বিদ্যালয়ে ভরতির হারের সূচক।

③ জীবনযাত্রার মান সূচক (Standard of Living Index- SLI) : মাথাপিছু প্রকৃত আয় বৃদ্ধি উন্নত জীবনযাত্রার মান সূচিত করে। সেই কারণে এক্ষেত্রে মাথাপিছু প্রকৃত আয় সূচকের মান নির্ণয় করা হয়। প্রদত্ত তিনটি সূচকের সরল গাণিতিক গড় নির্ণয়ের পরিবর্তে 2010 সাল থেকে সূচক তিনটির গুণোত্তর গড় নির্ণয় করে HDI গণনা করা হয়। এই নতুন পদ্ধতিকে বৈষম্য সমন্বয়কৃত HDI বলা হয়।

❐ HDI-এর মান : ①সূচকের সর্বনিম্ন মান ০ এবং সর্বোচ্চ মান 1। ②  কোনো দেশের মানব উন্নয়ন সূচকের মান 0.5 -এর কম হলে দেশটিকে নিম্ন মানব উন্নয়ন স্তরের দেশ বলা হবে। ③ এই মান যদি 0.5-0.8 -এর মধ্যে থাকে, তবে সেই দেশ মানব উন্নয়ন স্তরের মাঝামাঝি স্তরে আছে বলা হবে। ④ মানব উন্নয়নের সর্বোচ্চ স্তরের দেশগুলিতে এই সূচকের মান 0.8-1.0 -এর মধ্যে থাকে।

2020 সালে প্রকাশিত HDI-এর নিরিখে ভারত মাঝারি মানব . উন্নয়নের মাত্রা অর্জন করে ভারত 189 টি দেশের মধ্যে 131 তম স্থান অধিকার করেছিল। ভারতের অর্জিত মান ছিল 0.645। 2022 সালের সেপ্টেম্বর মাসে (সর্বশেষ) প্রকাশিত HDI-এর নিরিখে ভারতের র‍্যাংক 132 (191টি দেশের মধ্যে) এবং সংশ্লিষ্ট মান 0.633 এই রিপোর্টে প্রকাশিত HDI-এর নিরিখে প্রথম স্থান অধিকার করেছে নরওয়ে (0.957)।

❐ বৈষম্য সমন্বয়কৃত HDI (Inequality Adjusted HDI–IHDI) : ① HDI সূচকের মাধ্যয়ে কোনো দেশের স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং আয়—এই তিনটি ক্ষেত্রে দেশটির কৃতিত্বের পরিমাপ করা হয়। ② 2010 সালের পূর্বে প্রদত্ত ক্ষেত্রগুলির কৃতিত্বের পরিমাপগুলির গড় করে HDI পরিমাপ করা হত। অর্থাৎ দুটি দেশের আলাদা ক্ষেত্রগুলিতে কৃতিত্বের মান আলাদা হলেও তাদের গড় একই হতে পারে। ③ IHDI-তে এই সকল ক্ষেত্রের গড় মানের সঙ্গে ক্ষেত্রগুলির বর্তমান বৈষম্যকেও গণ্য করা হয়। এটিই কোনো দেশের প্রকৃত উন্নয়নকে সূচিত করে। ④ IHDI গণনা করা হয় ফস্টার, লোপেজ-কালভা এবং জেকেলির প্রদত্ত একটি কম্পোসিট নির্দেশকের ওপর ভিত্তি করে। প্রতিটি নির্দেশকের বৈষম্য সমন্বিত মানের গুণোত্তর মধ্যক দ্বারা IHDI গণনা করা হয়। ⑤ 2010 সাল থেকে IHDI গণনা শুরু হয়। মূলত নির্ণয় করে বৈষম্যের কারণে মানব উন্নয়নের কতটা ক্ষতিসাধন হচ্ছে।

❐ লিঙ্গবৈষম্য সূচক (Gender Inequality Index - GII ) : ① GII একটি বৈষম্য পরিমাপক সূচক। এর দ্বারা মানব উন্নয়নের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে লিঙ্গবৈষম্যের পরিমাপ করা হয়। ② এই ক্ষেত্র বা নির্দেশকগুলি হল— (i) প্রসবকালীন স্বাস্থ্য: এটির পরিমাপ করা হয় Maternal Mortality Ratio (MMR) এবং শিশুর জন্মহার-এর সাহায্যে। (ii) ক্ষমতায়ন: এটির পরিমাপ করা হয় সংসদে মহিলাদের শতকরা সংখ্যা এবং 25 বা তার বেশি বয়সি মহিলা ও পুরুষের অনুপাত (যাদের ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা হল মাধ্যমিক)-এর সাহায্যে। (iii) অর্থনৈতিক অবস্থান: এর পরিমাপ করা হয় শ্রমবাজারে অংশগ্রহণ (15 বা তার বেশি বয়সি মহিলা ও পুরুষ শ্রমিকের অনুপাত) দ্বারা। ③ GII-এর মান যত বেশি হবে বৈষম্য-এর পরিমাণও তত বেশি হবে। এটি প্রথম পরিমাপ করা হয় 2010 সালে। ④ 2019 সালের GII-এর নিরিখে ভারতের অর্জিত মান 0.488।

❐ Global Gender Gap (GGG) : ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম কর্তৃক এই রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। এটি কোনো দেশের নারী-পুরুষের মধ্যে সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক বৈষম্যকে নির্দেশ করে, যে 4টি বিষয় (সূচক)-এর ওপর ভিত্তি করে GGG নির্ণয় করা হয় সেগুলি হল— ① মহিলাদের শিক্ষা (Educational Attainment), ② মহিলাদের স্বাস্থ্য (Health and Survival), ③ মহিলাদের বেতনভিত্তিক শ্রমে অংশগ্রহণ (Economic Participation and Opportunity) এবং ④ রাজনৈতিক ক্ষেত্রে অংশগ্রহণ (Political Empowerment)। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, মহিলাদের রাজনৈতিক ক্ষেত্রে অংশগ্রহণ বলতে শুধুমাত্র মহিলাদের প্রাপ্তবয়স্ক ভোটাধিকার বোঝায় না। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম গুটি উপাদানের ভিত্তিতে এটি পরিমাপ করে—সংসদে (লোকসভা ও রাজ্যসভা) মোট আসনের কত শতাংশ মহিলাদের দ্বারা অধিকৃত, দেশের মোট মন্ত্রী সংখ্যার কত শতাংশ মহিলা ও পঞ্চাশ বছরের মধ্যে কত বছর কোনো দেশের সর্বোচ্চ রাজনৈতিক পদে (ভারতের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি) মহিলারা অধিষ্ঠিত থেকেছেন। 2022 সালের গ্লোবাল জেন্ডার গ্যাপ রিপোর্ট (GGG Report-2022) -এ ভারতের র‍্যাংক 135 (146 টি দেশের মধ্যে) এবং ভারতের স্কোর (0.629)।

❐ লিঙ্গ উন্নয়ন সূচক (Gender Development Index – GDI): এই তিনটি মূল বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে GDI প্রস্তুত করা হয় – ① স্বাস্থ্য: পুরুষ ও নারীর জন্মকালে প্রত্যাশিত আয়ুষ্কাল ② শিক্ষা: বালক ও বালিকাদের বিদ্যালয় শিক্ষার অভিপ্রেত সময় (বছরে) এবং 25 বছর ও তদূর্ধ্ব (পৃথকভাবে) পুরুষ ও মহিলাদের গড় বিদ্যালয় শিক্ষার সময়কাল (বছরে) ③ অর্থনৈতিক সম্পদ ভোগে সক্ষম: পুরুষ ও নারী কর্তৃক উপার্জিত অর্থের মূল্যায়ন । 2019 সালের GDI-এর নিরিখে ভারতের অর্জিত মান 0.820। 

❐ বহুমাত্রিক দারিদ্র্য সূচক (Multidimensional Poverty Index - MPI): অক্সফোর্ড পভার্টি অ্যান্ড হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভ (OPHI) ও ইউনাইটেড নেশনস ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম (UNDP) 2010 সালে এই সূচকটি প্রথম প্রকাশ করে। এক্ষেত্রে দারিদ্র্য পরিমাপের গুটি মাত্রা (dimension) আছে— ① স্বাস্থ্য (পুষ্টি, শিশুমৃত্যু) ② শিক্ষা (বিদ্যালয়ে শিক্ষার বছর, বিদ্যালয়ে উপস্থিতি) ③ জীবনযাত্রার মান (রান্নার জ্বালানি,নিকাশি ব্যবস্থা, পানীয় জল, বৈদ্যুতিক পরিসেবা, গৃহ, সম্পত্তি)। প্রদত্ত ক্ষেত্রগুলিতে নিম্নমান ও বঞ্চিত মানুষ দারিদ্র্য হিসেবে গণ্য হবে। MPI 2021-এর নিরিখে ভারতের অর্জিত মান 0.123।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)