পশ্চিমবঙ্গের ভূগোল (West Bengal Geography)

Esita Afrose
0
  

   west bengal geography for wbcs   

(১) পশ্চিমবঙ্গের অবস্থান :

পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যটি পূর্ব ভারতে অবস্থিত। রাজ্যটি দক্ষিণে 21°38′ উত্তর অক্ষাংশ থেকে উত্তরে 27° 10' উত্তর অক্ষাংশ পর্যন্ত এবং পশ্চিমে 85°50′ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ থেকে 89°50 পূর্ব দ্রাঘিমাংশ পর্যন্ত বিস্তৃত। কর্কট ক্রান্তিরেখা (23½° উত্তর অক্ষাংশ) পশ্চিমবঙ্গের প্রায় মধ্যভাগে নদিয়া (কৃষ্ণনগর, ধুবুলিয়া), পূর্ব বর্ধমান (গুসকরা, পূর্বস্থলী, আউসগ্রাম), পশ্চিম বর্ধমান (রাজবাঁধ), বাঁকুড়া (দুর্লভপুর), এবং পুরুলিয়া জেলার (আদ্রা) ওপর দিয়ে বিস্তৃত। এই রাজ্যটি উত্তর-দক্ষিণে প্রায় 623 কিলোমিটার এবং পূর্ব-পশ্চিমে প্রায় 320 কিলোমিটার বিস্তৃত। ও এই রাজ্যের সংকীর্ণতম অংশ হল উত্তর দিনাজপুর জেলার চোপড়া (মাত্র 9 কিলোমিটার প্রশস্ত)।

এই রাজ্যের উত্তরে হিমালয় পার্বত্য অঞ্চল, সিকিম (প্রতিবেশী রাজ্য) ও ভুটান, উত্তর-পশ্চিমে নেপাল, উত্তর-পূর্বে অসম ও পূর্বে বাংলাদেশ, পশ্চিমে বিহার ও ঝাড়খণ্ড, দক্ষিণ-পশ্চিমে ওডিশা এবং দক্ষিণে বিস্তৃত জলভাগ—বঙ্গোপসাগর বিদ্যমান। পশ্চিমবঙ্গের প্রতিবেশী রাজ্য—ঝাড়খণ্ড (সীমানা সর্বাধিক), ওডিশা, অসম, সিকিম (সীমানা সর্বনিম্ন)। পশ্চিমবঙ্গের প্রতিবেশী রাষ্ট্র—বাংলাদেশ (সীমানা সর্বাধিক), ভুটান, নেপাল (সীমানা সর্বনিম্ন)। পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী—কলকাতা, এটি প্রাসাদ নগরী (City of Palace) এবং আনন্দ নগরী (City of Joy) নামে খ্যাত

পশ্চিমবঙ্গের আয়তন বা ক্ষেত্রফল 88752 বর্গকিমি যা ভারতের মোট ক্ষেত্রফলের প্রায় 2.7%। আয়তনের দিক থেকে পশ্চিমবঙ্গ ভারতে 14 তম স্থান অধিকার করে। পশ্চিমবঙ্গে মোট প্রশাসনিক বিভাগ 5 টি এবং জেলার সংখ্যা 23টি। পশ্চিমবঙ্গের নবতম জেলা পশ্চিম বর্ধমান । পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য পশু—মেছো বিড়াল (Fishing Cat)। রাজ্য পাখি—মাছরাঙা (White-throated Kingfisher)।  রাজ্য বৃক্ষ—ছাতিম (Alstonia Scholaris) এবং রাজ্য ফুল—শিউলি ফুল (Night-flowering jasmine)।
Fishing Cat
Image Source : Wikipedia

White-throated Kingfisher
Image Source : Wikipedia

Alstonia Scholaris
Image Source : Wikipedia

Night-flowering jasmine
Image Source : Wikipedia

2014 সালের 25 জুন জলপাইগুড়ি জেলাকে বিভক্ত করে নতুন জেলা আলিপুরদুয়ার গঠন করা হয়। 14 ফেব্রুয়ারি 2017 দার্জিলিং জেলা ভেঙে কালিম্পং জেলা গঠিত হয়। 2017 সালের 4 এপ্রিল পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা ভেঙে ঝাড়গ্রাম জেলা গঠন করা হয়। 7 এপ্রিল 2017 বর্ধমান জেলা বিভক্ত হয়ে পশ্চিম বর্ধমান জেলা গঠিত হয়।

(২) পশ্চিমবঙ্গের প্রশাসনিক বিভাগ এবং জেলাসমূহ ও তাদের সদর দফতর

                ❒ পশ্চিমবঙ্গের প্রশাসনিক বিভাগ :
  • মালদা বিভাগ : মালদা, উত্তর দিনাজপুর, দক্ষিণ দিনাজপুর, মুরশিদাবাদ (মোট : 4টি জেলা)
  • বর্ধমান বিভাগ : পশ্চিম বর্ধমান, পূর্ব বর্ধমান, বীরভূম, হুগলি (মোট : 4টি জেলা)
  • জলপাইগুড়ি বিভাগ : দার্জিলিং, কালিম্পং, জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার (মোট : টি জেলা)
  • মেদিনীপুর বিভাগ : বাঁকুড়া, ঝাড়গ্রাম, পুরুলিয়া, পশ্চিম মেদিনীপুর, পূর্ব মেদিনীপুর (মোট : 5 টি জেলা)
  • প্রেসিডেন্সি বিভাগ : কলকাতা, হাওড়া, নদিয়া, উত্তর 24 পরগনা, দক্ষিণ 24 পরগনা (মোট : 5 টি জেলা)
🗺 পশ্চিমবঙ্গ মানচিত্র

❐ পশ্চিমবঙ্গের জেলাভিত্তিক সদর শহর :
জেলার নাম 一 সদর শহর
1. কালিম্পং  ➛ কালিম্পং
2. দার্জিলিং ➛ দার্জিলিং
3. আলিপুরদুয়ার ➛ আলিপুরদুয়ার
4. জলপাইগুড়ি ➛ জলপাইগুড়ি
5. কোচবিহার ➛ কোচবিহার
6. উত্তর দিনাজপুর ➛ রায়গঞ্জ
7. দক্ষিণ দিনাজপুর ➛ বালুরঘাট
8. মালদা ➛ ইংরেজবাজার
9. মুরশিদাবাদ ➛ বহরমপুর
10. নদিয়া ➛ কৃষ্ণনগর
11. বীরভূম ➛ সিউড়ি
12. পশ্চিম বর্ধমান ➛ আসানসোল
13. পূর্ব বর্ধমান ➛ বর্ধমান
14. হুগলি ➛ চুঁচুড়া
15. উত্তর 24 পরগনা ➛ বারাসাত
16. দক্ষিণ 24 পরগনা ➛ আলিপুর
17. হাওড়া ➛ হাওড়া
18. কলকাতা ➛ কলকাতা
19. বাঁকুড়া ➛ বাঁকুড়া
20. পুরুলিয়া ➛ পুরুলিয়া
21. পশ্চিম মেদিনীপুর ➛ মেদিনীপুর
22. ঝাড়গ্রাম ➛ ঝাড়গ্রাম
23. পূর্ব মেদিনীপুর ➛ তমলুক

পশ্চিমবঙ্গের নতুন প্রস্তাবিত নাম বাংলা। 26 জুলাই 2018 পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় নতুন নামকরণের প্রস্তাবটি সর্বসম্মতিক্রমে অনুমোদিত হয়েছে। বর্তমানে তা কেন্দ্রীয় সরকারের চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।

ভূপ্রকৃতি অনুযায়ী পশ্চিমবঙ্গকে ৫ টি প্রধান অঞ্চলে ভাগ করা যায়।
উত্তরে হিমালয়ের পার্বত্য অঞ্চল :
① দার্জিলিং জেলা, কালিম্পং জেলা, শিলিগুড়ি মহকুমা, জলপাইগুড়ি জেলার কিছু অংশ এবং আলিপুরদুয়ার জেলার কিছু অংশ নিয়ে এই অঞ্চলটি গঠিত। ② এই অঞ্চলে আছে শৈলশিরা (সিঙ্গালিলা ও দার্জিলিং), সংকীর্ণ নদী-উপত্যকা, পাথুরে বন্ধুর ভূমি। ③ এই অঞ্চলের গড় উচ্চতা 600-3000 মিটার। ④ তিস্তা নদী এই পার্বত্য অঞ্চলকে পূর্ব ও পশ্চিমে দুটি ভাগে বিভক্ত করেছে। ⑤ পশ্চিমবঙ্গের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ সান্দাকফু (উচ্চতা 3,631 মি) এই অঞ্চলে অবস্থিত। ⑥ অন্যান্য উল্লেখযোগ্য শৃঙ্গ ফালুট (3,596 মি), সবরগ্রাম (3,543 মি ),টাংলু ( 3,036 মি), ঋষিলা ( 3,121 মিটার) এবং টাইগার হিল (2,585 মি)। ⑦পৃথিবীর উচ্চতম রেলস্টশন ঘুম (উচ্চতা 2,300 মি) এই অন্যলে অবস্থিত।
⑧ বক্সাদুয়ার গিরিপথ হল আলিপুরদুয়ার থেকে ভুটানের প্রবেশপথ।

পার্বত্য অঞ্চলের উল্লেখযোগ্য শৈলশিরা ও পর্বতশৃঙ্গ :
  শৈলশিরা ----------------পর্বতশৃঙ্গ
① সিঙ্গালিলা ---সান্দাকফু (3,631 মि) 
② ঘুম পাহাড়-----ফালুট (3,596 মি)
③ দার্জিলিং-লেবং----সবরগ্রাম (3,543 মি)
④ ডাউন হিল-----ঋষিলা (3,121 মি) (দুরবিনদারা পর্বতশ্রেণির সর্বোচ্চ শৃঙ্গ)
⑤ তাকদা পেশক----- টাংলু (3,036 মি)
                                     টাইগার হিল (2,585 মি)
                                     মণিভঞ্জন (2,123 মি )
                                    রেনিগাঙ্গো (1,885 মि.)
                                    ছোটো সিঞ্চুলা (1,733 মি)

তরঙ্গায়িত মালভূমি ও উচ্চভূমি :
① পুরুলিয়া, ঝাড়গ্রাম, বাঁকুড়া, পশ্চিম মেদিনীপুর, বীরভূম, পশ্চিম বর্ধমানের অংশবিশেষ নিয়ে এই অঞ্চল গঠিত। সমগ্র এলাকাটি পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে ঢালু হয়ে সমভূমিতে মিশেছে। ② মালভূমি অঞ্চলের ছোটো ছোটো পাহাড়গুলিকে (অনুচ্চ টিলা বা মোনাডনক) স্থানীয় ভাষায় ডুংরী বলে। ③ এই অঞ্চলের উল্লেখযোগ্য পাহাড়গুলি হল অযোধ্যা পাহাড় (সর্বোচ্চ শৃঙ্গ গোগাবুরু—উচ্চতা 677 মিটার), বাঘমুন্ডি, পাতে ( 643 মি), বেলপাহাড়ি, মামা-ভাগ্নে (100 মি), শুশুনিয়া (440 মি) এবং বিহারীনাথ(435 মি)। ④ গ্রানাইট ও নিস শিলা দ্বারা গঠিত এই অঞ্চলটি ছোটোনাগপুর মাল-ভূমির অংশ। ⑤ অঞ্চলটির উচ্চতা পশ্চিম থেকে পূর্বে 500 মিটার থেকে কমে 100 মিটার হয়েছে।

মধ্যভাগের সমভূমি অঞ্চল : ① পশ্চিমবঙ্গের বেশিরভাগ এলাকাই এই অঞ্চলের অন্তর্গত। ② এই অঞ্চল উত্তরে দার্জিলিং-এর পার্বত্য অঞ্চলের পাদদেশ থেকে দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত । ③ এই অঞ্চলের অপর নাম নিম্ন গাঙ্গেয় সমভূমি। ④ গঙ্গানদী এই অঞ্চলকে দু-ভাগে ভাগ করেছে— উত্তরবঙ্গের সমভূমি ও দক্ষিণবঙ্গের সমভূমি।

(i) উত্তরবঙ্গের সমভূমি : গঙ্গার উত্তরে কোচবিহার, জলপাইগুড়ি, উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুর ও মালদহ নিয়ে এই অঞ্চল গঠিত। এই অঞ্চলের পাঁচটি ভাগ—তরাই ও ডুয়ার্স সমভূমি, মহানন্দা সমভূমি, বরেন্দ্রভূমি (প্রাচীন পলিমাটি দ্বারা গঠিত), দিয়ারা (নবীন পলিমাটি দ্বারা গঠিত) এবং তাল' (হ্রদ বা জলাভূমি)। তরাই শব্দের অর্থ স্যাঁতস্যাতে এবং ডুয়ার্স শব্দের অর্থ দরজা। (ii) দক্ষিণবঙ্গের সমভূমি : গঙ্গার দক্ষিণে মুরশিদাবাদ, নদিয়া, উত্তর ও দক্ষিণ 24 পরগনা, বর্ধমান, বাঁকুড়া, হুগলি, হাওড়া ও পূর্ব মেদিনীপুরের সমভূমি অঞ্চল নিয়ে এই অঞ্চল গঠিত। এই অঞ্চলের উত্তরভাগের (পূর্ব বর্ধমান, বীরভূম ও বাঁকুড়ার পূর্ব অংশ এবং পশ্চিম মেদিনীপুরের পূর্বাংশ) নাম ‘রাঢ় অঞ্চল’।

দক্ষিণভাগের বদ্বীপ অঞ্চল : ① বদ্বীপ অঞ্চলের উত্তরাংশ মধ্যভাগের সমভূমির পর থেকে বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত এই অঞ্চল বিস্তৃত। ② ভূপ্রকৃতি অনুসারে এই রদ্বীপ অঞ্চল তিনটি ভাগে বিভক্ত—(i) মৃতপ্রায় বদ্বীপ—নদিয়া, মুরশিদাবাদ, উত্তর 24 পরগনার উত্তর অংশ এই অঞ্চলের অন্তর্গত। (ii) পরিণত বদ্বীপ—বর্ধমান, হুগলি, হাওড়া, কলকাতা জেলা এর অন্তর্গত। (iii) সক্রিয় বদ্বীপ— দক্ষিণ 24 পরগনার ③ সুন্দরবন এই অঞ্চলের অন্তর্গত। ④ সুন্দরবনের কর্দমাক্ত নীচু জলাভূমি ‘বাদা' নামে পরিচিত। ⑤ সুন্দরবন অঞ্চলে গভীর ম্যানগ্রোভ অরণ্য অঞ্চল সৃষ্টি হয়েছে।

উপকূলের বালিয়াড়ি অঞ্চল : এই অঞ্চলের মধ্যে আছে কাঁথি বালিয়াড়ি ও দিঘাবালিয়াড়ি


 পশ্চিমবঙ্গের নদ-নদী 👇

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)