Class 11 2nd-semester Bengali Vabsammilan Kabita | একাদশ শ্রেণি বাংলা কবিতা ভাব সম্মিলন

Esita Afrose
0
 

একাদশ শ্রেণি দ্বিতীয় সেমিস্টার সাজেশন বাংলা

 বিষয়সংক্ষেপ : কবিতা ভাব সম্মিলন 
বৈষ্ণব পদকর্তাগণ প্রেম মনস্তত্ত্বের সুনিপুণ রূপকার, ভাবোল্লাস বা ভাব সম্মিলন পর্যায়ে তাঁরা সেই প্রেম মনস্তত্ত্ব বিশ্লেষণে অসাধারণ পরিচয় দিয়েচেন। ভাবোল্লাস—মিলনের এক বিচিত্র রূপ। মিলন যেহেতু সম্ভোগ-শৃঙ্গারের অন্তর্ভুক্ত, তাই ভাবোল্লাসও সম্ভোগ শৃঙ্গার। তবে এই মিলন শারীরিক নয়, সম্পূর্ণভাবে মানসিক। শ্রীরূপ গোস্বামী ‘উজ্জ্বল নীলমণি' গ্রন্থে ভাবোল্লাসের কথা উল্লেখ করেননি। কিন্তু ‘পদকল্পতরু' গ্রন্থের চতুর্থ শাখার দ্বাদশ পল্লবের নাম রেখেছেন ভাবোল্লাস। 'ভাবোল্লাস' একাধারে মিলনও বটে, আবার বিরহও বটে। আসলে কৃষ্ণ মথুরায় চলে যাওয়ার পর, আর কোনোদিনই বৃন্দাবনে ফিরে আসেননি। কিন্তু বৈয়ব মহাজনগণ রাধার বিরহকাতর অবস্থা দেখতে পারছিলেন না। তাই বাস্তবে না হলেও তাঁরা রাধাকৃষ্ণের মানসিক মিলনের ব্যবস্থা করে দেন। এই মিলনই হল ভাবোল্লাস। আমাদের পাঠ্য কি কহব রে সখি আনন্দ ওর' পদটি ভাবোল্লাস বা ভাব সম্মিলন পর্যায়ের একটি বিখ্যাত পদ। পদটির মধ্যে কৃষ্ণের সঙ্গে মিলনে উল্লসিতা রাধার আনন্দ-উচ্ছ্বাসের প্রকাশ ঘটেছে। আনন্দে আত্মহারা রাধা তাঁর সখিকে বলেছেন, তাঁর আনন্দের সীমা নেই। কারণ আর তিনি কোনোদিনই প্রিয়কে হারাবেন না। কৃষ্ণ চিরদিনের জন্য বন্দি হয়েছেন তাঁর ঘরে।বিরহ অবস্থায় রাধাকে বাঁধভাঙা চাঁদের হাসি যে পরিমাণ দুঃখ দিয়েছে, আজ প্রিয়-মুখ দর্শনে তিনি তত সুখই লাভ করলেন। রাধাকে যদি কেউ আঁচলভরে মহারত্ন দান করেন, তবুও তিনি তাঁর প্রিয়তমকে দূরদেশে পাঠাবেন না।

কৃষ্ণকে আর দূরদেশে না-পাঠানোর দৃঢ় সংকল্প থেকেই পরিষ্কার হয়ে ওঠে পদটি ভাবোল্লাসের। দীর্ঘ গ্রীষ্মের পর বর্ষার বারিধারায় জীব ও উদ্ভিদ জগৎ যেমন রোমাঞ্চিত হয়ে উঠে, তেমনি দীর্ঘ বিরহের পর প্রিয়-সান্নিধ্য রাধাকে আকুল করে তুলেছে। কৃষ্ণের সঙ্গে নিজের সম্পর্ককেও রাধা তাঁর অস্তিত্ব রক্ষার অনিবার্য প্রয়োজনের সঙ্গে তুলনা করে নতুন মাত্রা দান করেছেন। কৃষ্ণ তাঁর কাছে শীতের আচ্ছাদন, গ্রীষ্মের বাতাস, বর্ষাকালের ছাতা, আর অকূল সমুদ্রের তরণী। এখানেও রাধার একাগ্র-তন্ময়তা কৃষ্ণপ্রেমের অপূর্ব ব্যাখ্যা ভাবসম্মিলনের পদকে সৌন্দর্যমণ্ডিত করে তুলেছে। এই উপমা মালা ব্যবহার করেও কবি রাধার প্রেমকে যেন মর্ত্যচারী করে তুলেছেন। এক্ষেত্রে বোঝাই যাচ্ছে প্রিয়তমকে পাওয়ার আনন্দে রাধা সব কিছু বিস্মৃত হয়েছিলেন, জড়সত্তার সঙ্গে প্রাণসত্তার পার্থক্য বোধও লুপ্ত হয়েছিল তাঁর। বৈস্নব তত্ত্ব মেনে বিদ্যাপতি ভাবোল্লাসের পদ রচনা করেননি। তবুও রাধার অন্তরে তিনি প্রিয় মিলনের যে অনুভূতি জাগিয়ে তুলেছিলেন তা কাব্যিক প্রগাঢ়তায় আস্বাদনীয় হয়ে উঠেছে।

 কবিতা ভাব সম্মিলন : নামকরণের তাৎপর্য 
বৈষ্ণব পদ বা পদাবলী বিভিন্ন রসপর্যায়ে বিভক্ত। এই রসপর্যায়ের অন্যতম একটি পর্যায় হল ভাবোল্লাস বা ভাব সম্মিলন। কৃষ্ণ যখন অঙ্কুরের রথে চড়ে বৃন্দাবন ছেড়ে মথুরায় চলে যান তখন ব্রজধামে অর্থাৎ বৃন্দাবনে বিষাদের ছায়া নেমে আসে। মাধবের সাথে শ্রীরাধিকার আর সাক্ষাৎ হয়নি। বিরহের আতিশয্যে রাধা কল্পনা করতেন মাধব আবার এসেছেন, তাঁদের উভয়ের মিলন হয়েছে; এটাই ভাব সম্মিলন। এককথায় বলা যায়, ভাবজগতে রাধাকৃষ্ণের মিলনকে ভাবোল্লাস বা ভাব সম্মিলন বলে। বিদ্যাপতি রচিত আমাদের পাঠ্য পদ 'কি কহব রে সখি আনন্দ ওর' পদটিকে বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় শ্রীরাধিকা ভাবজগতে শ্রীকৃষ্ণের সাথে মিলনের আকাঙ্ক্ষায় বিভোর। শ্রীরাধিকা বলে ওঠেন তাঁর আনন্দের সীমা নেই; কারণ মাধব স্বয়ং তাঁর ঘরে। পাপী চন্দ্র তাঁকে শতদুঃখ দিলেও শ্রীরাধিকা প্রিয়া-মুখ দেখে সব দুঃখ ভুলে গেছেন। আসলে এ সবই রাধার স্বপ্নবিলাপ। বৈষ্ণব রসশাস্ত্রকারেরা শ্রীরাধিকার এই অবস্থাকে ভাবোল্লাস বা ভাব সম্মিলন বলে অভিহিত করেন। পদকর্তারা পদ রচনাকালে পদের নাম দেন না। তাঁরা রসপর্যায়ের পদ লেখায় সময় শুধুমাত্র সংখ্যা দিয়ে চিহ্নিত করেন। সংকলকগণ পদটি রসপর্যায়ের নাম অনুসারে ভাব সম্মিলন নামকরণটি করেছেন।

 আরো পড়ুন : 
একাদশ শ্রেণি বাংলা সেমিস্টার  : II 
Class - XI Bengali (2nd Semester)
গল্প
ছুটি Click Here
তেলেনাপোতা আবিষ্কার Click Here
কবিতা
ভাব সম্মিলন Click Here
লালন শাহ্ ফকিরের গান Click Here
নুন Click Here
নাটক
আগুন Click Here
পূর্ণাঙ্গ সহায়ক গ্রন্থ : পঞ্চতন্ত্র
বই কেনা Click Here
আজব শহর কলকেতা Click Here
পঁচিশে বৈশাখ Click Here
আড্ডা Click Here


বাংলা শিল্প-সাহিত্য ও সংস্কৃতির ইতিহাস | তৃতীয় অধ্যায় : আধুনিক বাংলা সাহিত্যের ধারা-গদ্যসাহিত্য | কাব্য কবিতার ধারা | বাংলা নাটক ও যাত্রার ধারা |  উপন্যাস ও ছোটোগল্প | চতুর্থ অধ্যায় : লৌকিক সাহিত্যের নানা দিক | প্রবন্ধরচনা |মানস-মানচিত্র অনুসরণে -বিতর্কমূলক

বাংলা শিল্প-সাহিত্য ও সংস্কৃতির ইতিহাস
তৃতীয় অধ্যায় : আধুনিক বাংলা সাহিত্যের ধারা
গদ্যসাহিত্য Click Here
কাব্য কবিতার ধারা Click Here
বাংলা নাটক ও যাত্রার ধারা Click Here
উপন্যাস ও ছোটোগল্প Click Here
চতুর্থ অধ্যায় : লৌকিক সাহিত্যের নানা দিক Click Here
প্রবন্ধরচনা
Click Here



(কবিতা) ভাব সম্মিলন নোটস : মার্ক - ২  
একাদশশ্রেণি বাংলা সেমিস্টার : II

১. 'চিরদিনে মাধব মন্দিরে মোর'- কথাটি কার এবং কথাটির অর্থ কী? 
➛ প্রশ্নোদ্ধৃত কথাটি মিলনে উল্লসিতা শ্রীরাধিকার। চিরদিনে মাধব মন্দিরে মোর' কথাটির অর্থ 'মাধব চিরদিনই তাঁর গৃহে অবস্থান করছেন।'

২. ‘পাপ সুধাকর যত দুখ দেল' – 'সুধাকর' শব্দের অর্থ উল্লেখ করে তাকে পাপী বলার কারণ কী?
➛ 'সুধাকর' শব্দের অর্থ 'চাঁদের কিরণ' বা 'জ্যোৎস্না'। মথুরা গমনের ফলে কৃষ্ণসঙ্গ বঞ্চিত শ্রীরাধিকার কামবেগ (মিলনেচ্ছা) বাড়িয়েছে চন্দ্রকিরণ। তাই বিরহকাতরা শ্রীরাধিকা সুধাকরকে 'পাপী' আখ্যা দিয়েছেন।

৩. ‘পিয়া-মুখ-দরশনে তত সুখ ভেল'—অংশটির অর্থ লেখো।
➛ চন্দ্রকিরণ বিরহিণী রাধার মনে যে মিলনেচ্ছা বাড়িয়েছিল 'পিয়া-মুখ' অর্থাৎ শ্রীকৃষ্ণের মুখ দেখে (অবশ্যই কল্পনায়) ততটাই সুখানুভূতি লাভ করেছিলেন শ্রীরাধিকা।

৪. ‘আঁচর ভরিয়া যদি মহানিধি পাই।’–‘আঁচর' ও 'মহানিধি' শব্দ দুটির অর্থ কী?
➛ ‘আঁচর' শব্দের অর্থ আঁচল এবং ‘মহানিধি' শব্দের অর্থ মূল্যবান রত্ন।

৫. ‘আঁচর ভরিয়া যদি মহানিধি পাই'—বক্তা আঁচর ভরে যদি মহানিধি পান তবুও তিনি কী করতে চান না?
➛ উদ্ধৃত অংশটির বক্তা মিলনে উল্লসিতা শ্রীরাধিকা। কৃয়সঙ্গ বঞ্চিতা শ্রীরাধিকা দীর্ঘ অপেক্ষার পর ভাবকল্পনায় যখন শ্রীকৃষ্ণ দর্শন পেয়েছেন, তখন কেউ তাঁকে আঁচল ভরে মূল্যবান রত্ন দিলেও তিনি তাঁর প্রিয়কে দূরদেশে পাঠাতে চান না।

৬. 'তব হাম পিয়া দূর দেশে না পাঠাই’— বক্তা পিয়াকে কেন দূরদেশে না-পাঠানোর কথা বলেছেন?
➛ প্রশ্নে আলোচিত উদ্ধৃতিটির বক্তা শ্রীরাধিকা। বৃন্দাবন থেকে কৃষ্ণ মথুরা চলে যাওয়ার ফলে শ্রীরাধিকা বিরহকাতরা হয়ে পড়েন। ভাব সম্মিলন পর্যায়ে শ্রীরাধিকা কাল্পনিক মিলনে যে সুখানুভূতি লাভ করেছিলেন সেই প্রেক্ষিতেই বলেছেন যে, কেহ যদি তাঁকে আঁচলভরে মূল্যবান রত্নও দেন তবু শ্রীরাধিকা তার প্রিয়কে দূরদেশে পাঠাবেন না।

৭. ‘শীতের ওঢ়নী পিয়া গীরিষির বা / বরিষার ছত্র পিয়া দরিয়ার না'—বক্তা উপমাগুলি কী অর্থে ব্যবহার করেছেন?
➛ বিরহাকাতরা শ্রীরাধিকা তাঁর প্রিয় শ্রীকৃষ্ণ যে তাঁর কাছে কতটা অপরিহার্য, তা বোঝাতে গিয়ে শীতের আচ্ছাদন, গ্রীষ্মের বাতাস, বর্ষার ছাতা ও অকুল সমুদ্রের তরণির মতো উপমাগুলি ব্যবহার করেছেন।

৮. ‘ভণয়ে বিদ্যাপতি শুন বরনারি।'—কবি বিদ্যাপতি ভণিতায় পাঠকের উদ্দেশ্যে কোন চিরন্তন সত্যটি ব্যক্ত করেছেন?
➛ কবি বিদ্যাপতি তাঁর ভণিতায় পাঠকের উদ্দেশ্যে বলেছেন যে, ভালো মানুষের জীবনে দুঃখ দু-চার দিনের বেশি স্থায়ী হয় না।

৯. বাঙালি পাঠকসমাজ বিদ্যাপতিকে কী কী অভিধায় ভূষিত করেছেন?
➛ বাঙালি পাঠকসমাজ বিদ্যাপতির কাব্যরস আস্বাদন করে তাঁকে ‘অভিনব জয়দেব’ ও ‘মৈথিলি কোকিল' অভিধায় ভূষিত করেছেন।

১০. বিদ্যাপতি যে ভাষায় পদ লিখেছেন সেই ভাষা দ্বারা প্রভাবিত দুজন কবির নাম লেখো।
➛ বিদ্যাপতি যে ভাষায় পদ লিখেছেন তা ব্রজবুলি ভাষা নামে পরিচিত। ব্রজবুলি ভাষা দ্বারা প্রভাবিত দুজন কবি হলেন—বৈষ্ণব কবি গোবিন্দদাস ও বাঙালি কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

১১. ভাব সম্মিলন বলতে কী বোঝ?
➛ কৃষ্ণ মথুরায় চলে যাওয়ার পর আর বৃন্দাবনে ফিরে আসেননি। কিন্তু বৈষ্ণব মহাজনরা রাধার বিরহ কাতরতা দেখতে পারছিলেন না। তাই বাস্তবে না-হলেও তাঁরা রাধাকৃষ্ণের মানসিক মিলনের ব্যবস্থা করে দেন, এই মিলনই হল ভাব সম্মিলন।

১২. ‘কি কহব রে সখি আনন্দ ওর’–কার লেখা কোন পর্যায়ের পদ? 
➛ উদ্ধৃত পদটি বিদ্যাপতির লেখা ‘ভাব সম্মিলন' পর্যায়ের অন্তর্গত।

১৩.'কি কহব রে সখি আনন্দ ওর' কথাটি কে, কার উদ্দেশে বলেছেন? 
➛ কৃষ্ণের সঙ্গে মিলনে উল্লসিতা রাধা আনন্দ-উচ্ছ্বসিত হয়ে সখীকে সম্বোধন করে বলেছেন, তাঁর আনন্দের সীমা নেই।

১৪ ভাব সম্মিলনে কৃষ্ণের সাথে নিজের অস্তিত্ব রক্ষার্থে রাধিকা কোন অনিবার্য প্রয়োজনের তুলনা করেছেন?
➛ নিজের অস্তিত্ব রক্ষার প্রয়োজনে রাধিকা কৃষ্ণকে তাঁর শীতের আচ্ছাদন, গ্রীষ্মের বাতাস, বর্ষার ছাতা আর অকুল সমুদ্রের তরণির সঙ্গে তুলনা করেছেন।

১৫. ভাব সম্মিলন পর্যায়ে শ্রীরাধিকার মনে আনন্দের সীমা নেই কেন? 
➛ ভাব সম্মিলন পর্যায়ে কৃষ্ণের সাথে রাধিকার যে কাল্পনিক মিলন সংঘঠিত হয়েছে তা থেকে বিরহিণী শ্রীরাধিকা ব্যক্ত করেছেন যে, তাঁর আনন্দের সীমা নেই; কারণ মাধব চিরদিনই তাঁর ঘরে অবস্থান করছে।

১৬. ‘ব্রজবুলি' ভাষা বলতে কী বোঝ?
➛ বৈষ্ণব পদাবলী রচনার উদ্দেশ্যে সৃষ্ট একটি কৃত্রিম ভাষার নাম ‘ব্রজবুলি’। নানান কথা প্রচলিত থাকলেও মূলত অবহট্ঠ ও মৈথিলি ভাষার সংমিশ্রণে গঠিত সমধুর এই সাহিত্যিক ভাষার নাম ব্রজবুলি। বিদ্যাপতি এই ভাষায় পদ রচনা করেছেন। কবি ঈশ্বর গুপ্ত ‘ব্রজবুলি' শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেন।

১৭. বৈষ্ণব পদাবলী ছাড়া বিদ্যাপতি কী কী গ্রন্থ লিখেছেন?
➛ বৈষ্ণব পদাবলী ছাড়া বিদ্যাপতি ‘কীর্তিলতা’, ‘কীর্তি পতাকা’, ‘ভূপরিক্রমা', ‘দুর্গাভক্তিতরঙ্গিনী', 'হরগৌরী' বিষয়ক গ্রন্থ লিখেছেন।

১৮. বিদ্যাপতি কোন কোন রাজা ও রানির পৃষ্ঠপোষকতা লাভ করেছিলেন? 
➛ বিদ্যাপতি ছয় জন রাজা— শিবসিংহ, কীর্তিসিংহ, দেবসিংহ, পদ্মসিংহ, পুরাদিত্য, ভৈরবসিংহ এবং রানি বিশ্বাস দেবীর পৃষ্ঠপোষকতা লাভ করেছিল।

১৯. বিদ্যাপতি কোন কোন পর্যায়ের পদ রচনায় শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেছেন? 
➛ বিদ্যাপতি পূর্বরাগ, অভিসার, মাথুর, প্রার্থনা, ভাব সম্মিলন প্রভৃতি পর্যায়ের পদ রচনায় শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেছেন।

২০. বিদ্যাপতিকে কী কী উপাধিতে ভূষিত করা হয়?
➛ মিথিলার কবি বিদ্যাপতি একাধিক উপাধিতে ভূষিত হয়েছেন। যেমন—মৈথিলি কোকিল, কবি সার্বভৌম, অভিনব জয়দেব, খেলনকবি।

২১. 'বিদ্যাপতি বাঙালি কবি নন' এ কথা কে প্রমাণ করেন?
➛ ১৮৫৭ সালে বঙ্গদর্শন পত্রিকায় প্রকাশিত রাজকৃষ্ণ মুখোপাধ্যায় তাঁর গবেষণামূলক গ্রন্থ 'বিদ্যাপতি'-তে প্রথম প্রমাণ করেন 'বিদ্যাপতি বাঙালি কবি নন।'

২২. সমালোচক ও বিদ্যাপতির পদ বিশ্লেষক শ্রীকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় ও আচার্য দীনেশচন্দ্র বিদ্যাপতি সম্বন্ধে কী বলেছেন?
➛ সমালোচক ও বিদ্যাপতির পদ বিশ্লেষক শ্রীকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় বিদ্যাপতিকে ‘Cosmic Imagination'-এর অধিকারী বলেছেন। আচার্য দীনেশচন্দ্র সেন তাঁর 'বঙ্গভাষা ও সাহিত্য' গ্রন্থে বিদ্যাপতি সম্পর্কে বলেছেন—“বাঙালি বিদ্যাপতির পাগড়ি খুলিয়া লইয়া ধুতি চাদর পরাইয়া দিয়াছে।”

(কবিতা) ভাব সম্মিলন নোটস : মার্ক -   
একাদশশ্রেণি বাংলা সেমিস্টার : II

১. ব্রজবুলি ভাষা সম্পর্কে যা জান লেখো।
➛ বিদ্যাপতির পদে এই বিশেষ ধরনের ভাষাটি পাওয়া যায়। বৈষ্ণব পদাবলীতে এই ভাষার ব্যবহার সুবিদিত হলেও এর জন্ম সম্পর্কে অধিকাংশের ধারণা অর্ধস্বচ্ছ। বস্তুত কথাটি খুব প্রাচীন নয়, ঊনবিংশ শতাব্দীতে ঈশ্বর গুপ্ত এই নামটি ব্যবহার করেন। এই ভাষার জন্মরহস্য আসলে নিহিত আছে 'অবহঠের' মধ্যে, অবহট্সের একটি কৃত্রিম সাহিত্যিক রূপ অবলম্বনে ব্রজবুলি ভাষা গড়ে উঠেছে। ভাষাতাত্ত্বিকরা এই ভাষার একটি সুষ্ঠ ব্যাকরণসম্মত রূপ প্রত্যক্ষ করেছেন। বাংলা ভাষায় প্রথম ব্রজবুলি ভাষায় পদ রচনা করেন যশোরাজ খান, মিথিলায় উমাপতি ওঝা। এই ভাষা কোমল ও শ্রুতিসুখকর। এই ভাষার উল্লেখযোগ্য কবি গোবিন্দদাস, যাঁকে আবার বলা হয় দ্বিতীয়। বিদ্যাপতি। স্বয়ং রবিঠাকুরও এই ভাষায় যথেষ্ট প্রাধান্য বিস্তার করেছেন।

২. 'কি কহব রে সখি আনন্দ ওর কথাটি কে, কার উদ্দেশে বলেছে? বক্তার এমন আনন্দের কারণ কী?
➛ কৃষ্ণের সঙ্গে মিলনে উল্লসিতা রাধা আনন্দ-উচ্ছ্বসিত হয়ে সখীকে সম্বোধন করে বলেছেন, তাঁর আনন্দের সীমা নেই। কৃষ্ণ মথুরা চলে যাওয়ার পর আর কোনোদিন বৃন্দাবনে ফিরে আসেননি। কিন্তু বৈষ্ণব মহাজনগণ রাধার বিরহকাতর অবস্থা দেখতে পারছিলেন না। তাই বাস্তবে না-হলেও তাঁরা রাধাকৃষ্ণের মানসিক মিলনের ব্যবস্থা করে দেন যা বৈষ্ণব নামানুসারে ভাবোল্লাস নামে খ্যাত। দীর্ঘ অনুপস্থিতির পর কৃষ্ণের সঙ্গে মানসিক মিলনে উল্লসিতা রাধার আনন্দ উচ্ছ্বাসের প্রকাশ ঘটেছে। ‘কি কহব রে সখি আনন্দ ওর' পদটিতে তারই প্রকাশ ঘটেছে। আনন্দে আত্মহারা রাধা তাঁর সখিকে বলেছেন, তাঁর আনন্দের আর সীমা নেই। কারণ তিনি আর কোনোদিনই প্রিয়কে হারাবেন না। কৃষ্ণ চিরদিনের জন্য বন্দি হয়েছেন তাঁর ঘরে।

৩. ‘পাপ সুধাকর যত দুখ দেল–সুধাকর কে এবং তাকে পাপী বলা হয়েছে কেন? সুধাকর কীভাবে রাধাকে দুঃখ দিয়েছিল?
➛ সুধাকর' শব্দের আক্ষরিক অর্থ 'চাঁদের কিরণ' বা ‘জ্যোৎস্না'। অর্থাৎ ‘সুধাকর' হলেন চাঁদ। মথুরা গমনের ফলে কৃয়সঙ্গ বঞ্চিত শ্রীরাধিকার কামবেগ (মিলনেচ্ছা) বাড়িয়েছে চন্দ্রকিরণ। তাই বিরহকাতরা শ্রীরাধিকা সুধাকরকে 'পাপী' বলে সম্বোধিত করেছেন। শ্রীকৃষ্ণ অঙ্কুরের রথে চেপে বৃন্দাবন ছেড়ে মথুরায় গমন করলে ব্রজধামে নেমে আসে শোকচ্ছায়া। শুরু হয় রাধিকার বিরহ। বিরহ ও বিকারের আবেশে রাধা কল্পনায় কৃষ্ণসঙ্গ সুখভোগ করছে—একেই ভাব সম্মিলন বলা হয়। কবির কথায় এই চাঁদ অর্থাৎ চাঁদের কিরণ বিরহীর যন্ত্রণার কারণ হয়। কৃষ্ণসঙ্গ বঞ্চিত থাকা কালে চন্দ্রকিরণ বিরহিণী রাধার কামবেগ (মিলনেচ্ছা) বাড়িয়েছে, যা রাধিকার পক্ষে হয়েছে পীড়াদায়ক। বিরহ বহুগুণ হয়েছে, তাই শ্রীরাধিকা চাঁদকে ‘পাপ সুধাকর' বলেছেন।

৪. পিয়া-মুখ-দরশনে তত সুখ ভেল।/আঁচর ভরিয়া যদি মহানিধি পাই।—‘আঁচর' ও ‘মহানিধি' শব্দ দুটির অর্থ কী? উদ্ধৃতাংশের তাৎপর্য ব্যাখ্যা করো।
➛ প্রশ্নোদ্ধৃত অংশের ‘আঁচর' শব্দের অর্থ আঁচল এবং ‘মহানিধি' শব্দের অর্থ মূল্যবান রত্ন। পাঠ্য বিদ্যাপতির ‘ভাব সম্মিলন' নামক পদে দেখা যায়, শ্রীকৃষ্ণ বৃন্দাবন ছেড়ে মথুরা গমন করলে রাধার বিরহ শুরু হয়। এই বিরহ ও বিকারের আবেশে রাধা কল্পনার মাধ্যমে কৃষ্ণ-সঙ্গসুখ উপভোগ করছেন—একেই ভাব সম্মিলন বা ভাবোল্লাস নাম দেওয়া হয়েছে। কৃয়সঙ্গ থেকে বঞ্চিত থাকার কালে চন্দ্রকিরণ শ্রীরাধিকার মনে কামবেগ (মিলনেচ্ছা) জাগ্রত করেছিল। অর্থাৎ পাপী চাঁদ শ্রীরাধিকাকে যে দুঃখ দিয়েছিল তা পিয়ামুখ দরশনে মুক্ত হয়েছিল। ভাব সম্মিলনে কৃয়সঙ্গ লাভে আপ্লুতা শ্রীরাধিকা তাই বলেছেন, আঁচল ভরে কেহ যদি তাঁকে মূল্যবান রত্নরাজিও দেয়, তবে তিনি তাঁর প্রিয়কে আর দূরদেশে পাঠাবেন না। বৈঘ্নব পদকর্তারা রাধার বিরহযন্ত্রণা অনুভব করেই এই ভাব সম্মিলনের পদ সৃষ্টি করেছেন।

৫. ‘শীতের ওঢ়নী পিয়া গীরিষির বা।/ বরিষার ছত্র পিয়া দরিয়ার না।—উপমাগুলির ব্যবহার কী অর্থে হয়েছে? উদ্ধৃতাংশে পদকর্তা কীভাবে রাধাকৃষ্ণের প্রেমলীলা বর্ণনা করেছেন তা ব্যক্ত করো।
➛ বিরহাকাতরা শ্রীরাধিকা তাঁর প্রিয় শ্রীকৃষ্ণ যে তাঁর কাছে কতটা অপরিহার্য, তা বোঝাতে গিয়ে শীতের আচ্ছাদন, গ্রীষ্মের বাতাস, বর্ষার ছাতা ও অকুল সমুদ্রের তরণির মতো উপমাগুলি ব্যবহার করেছেন। মৈথিলি কোকিল বিদ্যাপতির ‘ভাব সম্মিলন' শীর্ষক পাঠ্য পদটিতে আমরা দেখি কৃষ্ণ ব্রজধাম ত্যাগ করলে শ্রীরাধিকার বিরহজ্বালা তীব্র থেকে তীব্রতর হতে থাকে। পাপ সুধাকর অর্থাৎ চাঁদ তাঁর কামবেগ বা মিলনেচ্ছাকে আরও বহুগুণে বৃদ্ধি করেছিল। এমতাবস্থায় শ্রীরাধিকা কৃষ্ণের সঙ্গে স্বপ্নে মিলিত হন এবং পিয়ামুখ দরশনে যারপরনাই সুখ অনুভব করেন। পেয়ে হারানোর ভয় থেকে শ্রীরাধিকার মুখে শোনা যায়, আঁচলভরা মহামূল্যবান রত্নরাজি দিলেও তিনি তাঁর প্রিয়কে দূরে পাঠাবেন না। শুধু তাই নয় তিনি কৃষ্ণনির্ভরতার কথা বলতে গিয়ে বলেছেন—কৃষ্ণ তাঁর অর্থাৎ রাধার বর্ষার ছাতার মতো সর্বপ্রকার বর্ষণ রোধ করেন; কিংবা নদী পার হতে নৌকা যেমন অনিবার্য তেমনি ভবসমুদ্র পার হওয়ার তরণি স্বরূপ অনিবার্য শ্রীকৃষ্ণ পদচ্ছায়া। এছাড়া শীতকালে ওঢ়নী বা চাদর যেমন অনিবার্য, গ্রীষ্মকালের বাতাস যেমন প্রাণদায়ক—রাধার কাছেও কৃষ্ণ তদনুরূপ অনিবার্য।

৬. ‘ভণয়ে বিদ্যাপতি শুন বরনারি।/সুজনক দুখ দিবস দুই-চারি।'—কথাগুলির তাৎপর্য ব্যাখ্যা করো।
➛ ভাবোল্লাস মিলনের এক বিচিত্ররূপ। শ্রীরূপ গোস্বামী ‘উজ্জ্বল নীলমণি” গ্রন্থে ভাবোল্লাসের কথা উল্লেখ করেননি কিন্তু ‘পদ কল্পতরু’ গ্রন্থের চতুর্থ শাখার স্বদেশ পল্লবের নাম রেখেছেন ‘ভাবোল্লাস'। আসলে কৃষ্ণ মথুরায় চলে যাওয়ার পর, আর কোনোদিনই বৃন্দাবনে ফিরে আসেননি, কিন্তু বৈস্নব মহাজনগণ রাধার বিরহকাতর অবস্থা দেখতে পারছিলেন না। তাই বাস্তবে না-হলেও তাঁরা রাধাকৃষ্ণের মানসিক মিলনের ব্যবস্থা করে দেন। এই মিলনই হল ভাবোল্লাস। এখানে আমরা ভাবজগতে উন্নীতা শ্রীরাধার এক অসাধারণ রূপের পরিচয় তাই। স্বপ্নমিলনের ফলশ্রুতিতে বিরহিণী রাধিকার মনে যে আবেগ-আপ্লুতা অবস্থা দেখা দিয়েছিল—তা দেখে বিদ্যাপতি শ্রীরাধিকার উদ্দেশে বলেছেন—ওগো বরণীয়া, নারীশ্রেষ্ঠা তোমার আনন্দ দেখে বুঝলাম তোমার এতদিনের দুঃখ নিতান্ত তুচ্ছ। আসলে যারা সুজন হন তাদের দুঃখ দু-চার দিনের জন্য স্থায়ী হয়। আসলে দুঃখের ভিতর দিয়েই তার পরীক্ষা হয়। কবির বিশ্বাস তার সুদিন আসবেই।

৭. বিদ্যাপতি বাংলা দেশের অধিবাসী না-হয়েও কীভাবে বাঙালির নিজস্ব কবি হয়ে উঠলেন তা আলোচনা করো?
➛ মৈথিলি কবি বিদ্যাপতি মিথিলার কবি হয়েও বাঙালির কবি হয়ে ওঠার পিছনে যথেষ্ট কারণ আছে। “চৈতন্যচরিতামৃত' গ্রন্থ থেকে জানা যায় মহাপ্রভু বিদ্যাপতির পদ আস্বাদনে ধন্য হয়েছিলেন। এ ছাড়াও মিথিলা ও বাংলার সাংস্কৃতিক আদানপ্রদান সর্বজনবিদিত। তাই বিদ্যাপতির পদাবলী বিশেষ করে রাধাকৃষ্ণলীলা বিষয়ক পদাবলী মিথিলার তুলনায় বাংলায় বেশি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল। বাংলায় রচিত ‘গীতগোবিন্দম’ থেকেও বিদ্যাপতি ঋণগ্রহণ করে ‘অভিনব জয়দেব’ আখ্যায় ভূষিত হন। এ ছাড়াও চৈতন্যোত্তর পদাবলী সাহিত্যও বিদ্যাপতির প্রভাবে প্রভাবিত। তার বড়ো প্রমাণ গোবিন্দদাসের ‘দ্বিতীয় বিদ্যাপতি' উপাধি ধারণ। এসব তথ্যই প্রশ্নোদ্ধৃত বক্তব্য সমর্থনের পক্ষে যথোপযুক্ত।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)