একাদশ শ্রেণি সংস্কৃত দ্বিতীয় সেমিস্টার গীতিকাব্য
❐ সংস্কৃত সাহিত্যের ইতিহাস (সংস্কৃত গীতিকাব্য)
মার্ক - ২ পরীক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ সাজেশন নোটস
১. গীতিকাব্য বা 'Lyric'- কথাটি কোন শব্দ থেকে এসেছে? 'Lyre' কথাটির অর্থ কী?
➛ গীতিকাব্য বা ‘Lyric' কথাটি গ্রিকশব্দ ‘Lyre’ থেকে এসেছে। ‘Lyre' কথাটির অর্থ বীণাজাতীয় বাদ্যযন্ত্র।
২. গীতিকাব্য কাকে বলে?
➛ গ্রিক শব্দ ‘Lyre' থেকে গীতিকাব্য বা Lyric শব্দটি এসেছে। Lyre শব্দের অর্থ বীণাজাতীয় বাদ্যযন্ত্র। মানবহৃদয়ের আনন্দ, বেদনা, হতাশাব্যঞ্জক অনুভূতিগুলিকে প্রকাশের জন্য বীণাজাতীয় যন্ত্রের দ্বারা যে গান গাওয়া হয়, তাকে গীতিকাব্য বলে। পরে অর্থপ্রসারের ফলে কবি ভাবনার উচ্ছ্বাসে রচিত কবিতা গানগুলি গীতিকবিতার পদবি লাভ করেছে।
৩. কোন বেদে গীতিকাব্যের প্রথম পরিচয় পাওয়া যায়? চারটি গীতিকাব্যের উদাহরণ দাও।
➛ সর্বপ্রথম ঋগবেদে গীতিকাব্যের পরিচয় পাওয়া যায়। চারটি গীতিকাব্য হল অশ্বঘোষের 'গণ্ডীস্তোত্রগাথা', কালিদাসের ‘মেঘদূত’, ভর্তৃহরির ‘শৃঙ্গারশতক’ এবং জয়দেবের ‘গীতগোবিন্দ’।
৪. গীতিকাব্যের উৎস কী?
➛ ঋগ্বেদের উষাসূক্ত, রামায়ণ-মহাভারত, অশ্বঘোষের ‘সৌন্দরনন্দ' ও ‘গণ্ডীস্তোত্রগাথা', হালের ‘গাথাসপ্তশতী’–এগুলিতে গীতিকাব্যের উপাদান পাওয়া যায়।
৫. সংস্কৃত গীতিকাব্য রচনার কয়টি ধারা ও কী কী?
➛ সংস্কৃত গীতিকাব্য রচনার তিনটি ধারা। যথা- ➀ ভক্তিমূলক—শঙ্করাচার্যের ‘ভবান্যষ্টক'। ➁ প্রেমমূলক—অমরুর ‘অমরুশতক’। ➂ নীতিমূলক—ভর্তৃহরির ‘নীতিশতক’।
৬. লক্ষ্মণ সেনের রাজসভায় 'পঞ্চরত্ন' কাদের বলা হত?
➛ বাংলার শেষ স্বাধীন রাজা লক্ষ্মণ সেনের রাজসভায় পাঁচজন কবিকে ‘পঞ্চরত্ন’ বলা হত। সেই পাঁচজন কবি হলেন- ➀ গোবর্ধনাচার্য, ➁ ধোয়ী, ➂ শরণ, ➃ উমাপতি ধর এবং ➄ জয়দেব।
৭. জয়দেব কে ছিলেন?
➛ গীতিকাব্যের ইতিহাসে মহাকবি কালিদাসের পরেই যাঁর নাম ভক্তিভরে স্মরণ করা হয়, তিনি হলেন জয়দেব। তিনি রাধাকৃষ্ণের অপ্রাকৃত প্রেমলীলাকে উপজীব্য করেই কালজয়ী ‘গীতগোবিন্দ' নামক গীতিকাব্যটি রচনা করেছিলেন।
৮. জয়দেব কোন সময়ে আবির্ভূত হয়েছিলেন? তিনি কোথায় জন্মগ্রহণ করেন?
➛ জয়দেব সেনবংশীয় রাজা লক্ষ্মণ সেনের সময়কালে অর্থাৎ আনুমানিক দ্বাদশ শতাব্দীতে আবির্ভূত হয়েছিলেন। তিনি বর্তমান পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলায় অজয় নদের তীরে অবস্থিত কেন্দুবিল্ব গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
৯. কবি জয়দেবের জন্মস্থান কেন্দুবিল্ব গ্রামটি কোন জেলার অন্তর্গত? জয়দেবের পদবি কী?
➛ কবি জয়দেবের জন্মস্থান কেন্দুবিল্ব গ্রামটি বীরভূম জেলার অন্তর্গত। কবি জয়দেবের পদবি হল গোস্বামী।
১০. জয়দেবকে কেন বাংলা, ওড়িশা ও মিথিলা নিজের নিজের অঞ্চলের কবিরূপে দাবি করেন?
➛ জয়দেবের জন্মস্থান কেন্দুবিল্ব গ্রাম। এই কেন্দুবিল্ব বলতে বীরভূমের অজয় নদের তীরবর্তী ‘কেন্দুলি’ গ্রামকে বোঝায়। আবার ওড়িশার পুরীর কাছেও ‘কেন্দুলী' নামে একটি গ্রাম আছে। এ ছাড়া মিথিলাতেও ‘কেন্দোলি' নামে একটি গ্রাম আছে। তাই বাংলা, ওড়িশা ও মিথিলা জয়দেবকে নিজের নিজের কবিরূপে দাবি করেন।
১১. কবি জয়দেবের পরিচয় দাও।
➛ কান্তকোমল পদাবলির কাব্য গীতগোবিন্দের রচয়িতা কবি জয়দেবের পিতার নাম ভোজদেব এবং মাতার নাম বামাদেবী পক্ষান্তরে রামাদেবী। কবির পত্নীর নাম পদ্মাবতী। তিনি বর্তমান পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলায় অজয় নদের তীরে অবস্থিত কেন্দুবিল্ব গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন এবং বাংলার শেষ স্বাধীন রাজা লক্ষ্মণ সেনের সভাকবি ছিলেন।
১২. কবি জয়দের কোন রাজার সভাকবি ছিলেন? তাঁর পিতা, মাতা ও পত্নীর নাম লেখো।
➛ কবি জয়দেব বাংলার শেষ স্বাধীন রাজা লক্ষ্মণ সেনের সভাকবি ছিলেন। তাঁর পিতার নাম ভোজদেব এবং মাতার নাম বামাদেবী পক্ষান্তরে রামাদেবী। কবির পত্নীর নাম পদ্মাবতী।
১৩.‘বাংলা রবি জয়দেব কৰি কান্তকোমল পদে।
করেছে সুরভি সংস্কৃতের কাঞ্চন কোকনদে।।'—এটি কার উক্তি? বক্তা কোথায় এই উক্তিটি করেছেন?
➛ এটি ছন্দের জাদুকর কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের উক্তি। বক্তা অর্থাৎ কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত তাঁর ‘আমরা’ কবিতায় বাঙালির গৌরবগাথা রচনা প্রসঙ্গে উক্তিটি করেছেন।
১৪. জয়দেব রচিত গীতিকাব্যটির নাম কী? তিনি কার অনুপ্রেরণায় গীতিকাব্যটি রচনা করেন?
➛ কবি জয়দেব রচিত গীতিকাব্যটির নাম হল ‘গীতগোবিন্দম্’। কবি জয়দেব তাঁর পত্নী পদ্মাবতীর প্রগাঢ় প্রেমের অনুপ্রেরণায় ‘গীতগোবিন্দ' রচনা করেন।
১৫. গ্রন্থটির নাম 'गीतगोबिन्दिम्' দেওয়া হয়েছে কেন?
➛ জয়দেব রচিত গীতিকাব্য ‘গীতগোবিন্দম্’-এর নায়ক গোবিন্দ বিশ্বাত্মার প্রতীক, যার সঙ্গে জীবাত্মার প্রতীক শ্রীরাধার বিচ্ছেদ এবং মিলনের সবিস্তারিত বর্ণনাই ‘গীতগোবিন্দ’-এর মূল উপজীব্য বিষয়; তাই গ্রন্থটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘গীতগোবিন্দ'।
১৬. 'गीतगोबिन्दिम्' কাব্যের পরিচয় দাও?
➛ ভক্তিরসে আপ্লুত ‘গীতগোবিন্দ’ কবি জয়দেবের কোমলকান্ত পদাবলির কাব্য। সংস্কৃত গীতিকাব্যের দরবারে এই কাব্য উচ্চালংকৃত। এই কাব্যে শ্রীরাধা ও শ্রীকৃষ্ণের মাধুর্যময়ী প্রেমলীলার এক অপার্থিব ভাবরূপ স্ফুরিত হয়েছে এবং ভক্তিরস ও প্রেমলীলার মুগ্ধতায় শ্রীকৃষ্মের বসন্তকালীন লীলাবলম্বনে কাব্যটি সৌন্দর্যমণ্ডিত হয়েছে।
১৭. কবি জয়দেবের 'गीतगोबिन्दिम्' কাব্যের উৎস কী?
➛ শ্রীমদ্ভাগবতপুরাণের দ্বাদশ স্কন্ধের পরমপুরুষ শ্রীকৃষ্ণের বসন্তকালীন লীলাকে কেন্দ্র করে জয়দেব এই ভক্তিমূলক গীতিকাব্য রচনা করেন। এ ছাড়াও হরিবংশ, বিষ্ণুপুরাণ, ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণ, সাতবাহন হাল সংকলিত গাথাসপ্তসতী (গাহাসত্তসঈ) নামক কাব্যের প্রভাব ‘গীতগোবিন্দম্’ কাব্যে লক্ষ করা যায়।
১৮. 'गीतगोबिन्दिम्' কাব্যটির প্রকৃতিগত বৈশিষ্ট্য কী?
➛ কবি জয়দেব তাঁর জীবনসঙ্গিনী পদ্মাবতীর অনুপ্রেরণায় অপ্রাকৃত কান্তা প্রেমের গীতিকাব্য ‘গীতগোবিন্দ' রচনা করেন। ভাগবতের দ্বাদশ স্কন্ধ অবলম্বনে ১২টি সর্গে এই কাব্য রচিত। এই কাব্যে ২৪টি গীত এবং ৮০টি শ্লোক রয়েছে। রাধাকৃষ্ণের অপ্রাকৃত প্রেমলীলাকে উপজীব্য করে এই বৈবসাধক কবি পাঠক সমাজের মন জয় করেছেন।
১৯. 'गीतगोबिन्दिम्' কাব্যে কয়টি সর্গ, শ্লোক এবং গান রয়েছে?
➛ ‘গীতগোবিন্দম্’-এ মোট ১২টি সর্গ, ৮০টি শ্লোক এবং ২৪টি গান রয়েছে।
২০. 'गीतगोबिन्दिम्' কোন ভাষায় রচিত? এই গীতিকাব্যের শ্লোকগুলি কোন ছন্দে রচিত?
➛‘গীতগোবিন্দম্’ সংস্কৃত ভাষায় রচিত। এই গীতিকাব্যের বেশিরভাগ শ্লোকগুলি শার্দুলবিক্রীড়িত ছন্দে রচিত হলেও, এখানে উপেন্দ্রবজ্রা, পুষ্পিতাগ্রা, স্রগ্ধরা, মাত্রাবৃত্ত প্রভৃতি বিবিধ ছন্দ রয়েছে।
২১. 'गीतगोबिन्दिम्' - এর বারোটি সর্গের নাম ক্রমানুযায়ী লেখো।
➛ জয়দেব রচিত ‘গীতগোবিন্দ’-এর বারোটি সর্গ হল- ⅰ. সামোদ-দামোদর, ⅱ. অক্লেশ-কেশব, ⅲ. মুগ্ধ-মধুসূদন, ⅳ. স্নিগ্ধ-মধুসূদন, ⅴ. সাকাঙ্ক্ষপুণ্ডরীকাক্ষ, ⅵ. ধৃষ্টবৈকুণ্ঠ, ⅶ. নাগর-নারায়ণ, ⅷ. বিলক্ষ-লক্ষ্মীপতি, ⅸ. মুগ্ধ-মুকুন্দ, ⅹ.মুগ্ধ-মাধব, ⅺ. সানন্দ-গোবিন্দ, ⅻ. সুপ্রীত-পীতাম্বর।
২২. 'गीतगोबिन्दिम्' - এর প্রথম ও শেষ সর্গের নাম লেখো।
➛ ‘গীতগোবিন্দম্’-এর প্রথম সর্গের নাম সামোদ-দামোদর এবং শেষ সর্গের নাম সুপ্রীত-পীতাম্বর।
২৩. 'गीतगोबिन्दिम्' -এর চারটি কাব্যবৈশিষ্ট্য লেখো।
➛ কোমলকান্ত পদাবলির কাব্য ‘গীতগোবিন্দ'। এর চারটি বৈশিষ্ট্য হল— ➀ এই গীতিকাব্যটি নাট্যগীতের আকারে লেখা। ➁ উক্তি-প্রত্যুক্তির মধ্য দিয়ে এটি পরিবেশিত হয়েছে। ➂ কাব্যটি সংস্কৃতে রচিত হলেও তার ভাবধর্ম একান্তভাবে লৌকিক প্রাণধর্মের অনুকূল। ➃ কবি রাধাকৃষ্ণের প্রেমকাহিনিকে আধ্যাত্মিক রূপ দান করেছেন। এটি একটি মিলনান্তক ভক্তিমূলক গীতিকাব্য।
২৪. পদাবলি সাহিত্যে গীতগোবিন্দের সাহিত্যিক মূল্য কতখানি? অথবা, কোন কবিকে 'মৃত্যুঞ্জয়ী কবি' বলা হয় এবং কেন?
➛ কবি জয়দেবের কোমলকান্ত পদাবলির ভক্তিমূলক গীতিকাব্য ‘গীতগোবিন্দ’, কবি প্রতিভার প্রাচুর্যে সৌন্দর্যমণ্ডিত। কবির বাস্তব অনুভূতিতে অবাস্তব প্রেম ও সৌন্দর্যের কল্পলোক বাস্তবে পরিণত হয়েছে। ভাবের গভীরতায়, পদের লালিত্যে, ছন্দের সুষমায় ও শাশ্বত সৌন্দর্যের চিত্রকল্পে বাংলার কবি জয়দেব মৃত্যুঞ্জয়ী। তাই এই কাব্যটির মৌলিকতা ও সাহিত্যিক মূল্য অপার্থিব।
২৫. 'गीतगोबिन्दिम्' -এর বিষয়বস্তু অবলম্বনে কবির রচনাশৈলীর সংক্ষিপ্ত বাণীচিত্র অঙ্কন করো।
➛ গৌড়ের রাজা লক্ষ্মণ সেনের সভাকবি জয়দেব কর্তৃক সংস্কৃত ভাষায় রচিত গীতিকাব্য ‘গীতগোবিন্দম্’। এই কাব্যে বৃন্দাবনে শ্রীকৃষ্ণের গোপিনীদের সঙ্গে রাসলীলা, রাধার বিষাদ বর্ণনা, কৃষ্ণের জন্য ব্যাকুলতা, কৃয়ের উৎকণ্ঠা, সখীদের দ্বারা রাধার বিরহসভাপ প্রভৃতির বর্ণনা রয়েছে। মনোরম রচনাশৈলী, ভাবপ্রবণতা, সুমধুর রাগরাগিণী, ধর্মীয় তাৎপর্য তথা সুললিত কোমলকান্ত পদাবলির সমন্বয়ে সাহিত্যিক রসপিপাসুদের অপার আনন্দ প্রদান করে যে কাব্য তার নাম ‘গীতগোবিন্দম্।
২৬. 'मेघदूतम्' -কে লিখেছিলেন? এটি কোন শ্রেণির কাব্য?
➛ ‘মেঘদূত' লিখেছিলেন মহাকবি কালিদাস। ‘মেঘদূত’ হল একটি প্রেমমূলক গীতিকাব্য।
২৭. 'मेघदूतम्' -কাব্যের উৎস কী?
➛ ‘মেঘদূত'-এর উৎস সম্পর্কে পণ্ডিতগণ কোনো সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছোতে পারেননি। ঋগবেদে, রামায়ণ-মহাভারতে বিভিন্ন প্রকারের দূতের কথা জানা যায়। তবে সাধারণভাবে রামায়ণ উল্লিখিত হনুমৎসন্দেশ অংশটি কবির অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করেছিল বলে মনে করা হয়।
২৮. 'मेघदूत' গীতিকাব্যে পূর্বমেঘের বিষয় সংক্ষেপে লেখো।
➛ ‘মেঘদূত’ খণ্ডকাব্যের প্রথম অংশ পূর্বমেঘে দেখা যায়, রামগিরি আশ্রমে নির্বাসিত যক্ষের বিরহকাতরতা। প্রিয়াবিরহী এক যক্ষ আষাঢ়ের প্রথম দিবসে পর্বতের সানুদেশে এক খণ্ড মেঘকে দেখে দূতরূপে নির্বাচন করে। চেতনাচেতন ভেদজ্ঞানশূন্য বিরহী যক্ষ রামগিরি থেকে অলকাপুরী পর্যন্ত মেঘের যাত্রাপথের নির্দেশ দিয়েছে। এখানে মেঘের যাত্রাপথে বর্ণিত হয়েছে বিভিন্ন নদী-প্রান্তর ও মরুভূমি এবং অবন্তী। বিশালা উজ্জয়িনী পার হয়ে শেষে অলকায় উত্তরণ। মেঘের এই যাত্রাপথের ভৌগোলিক বিবরণের মধ্যেই রূপ-রস-সৌন্দর্যের সমাবেশে প্রেমার্ত-হৃদয়ের আকুতির চিত্রও কবি নিপুণভাবে অঙ্কন করেছেন।
২৯. 'मेघदूत' খন্ডকাব্যে উত্তরমেঘের বিষয় সংক্ষেপে বর্ণনা করো।
➛ মেঘদূত খণ্ডকাব্যের দ্বিতীয় অংশ উত্তরমেঘের বিষয় হল— অলকাপুরীর সৌন্দর্য মাধুর্যের সঙ্গে যুবতীশ্রেষ্ঠা যক্ষপ্রিয়ার অপরূপ মাধুরীর বর্ণনা। উৎসবের, যৌবনের ও প্রেমের লীলাভূমি অলকা। সেখানে উদ্যানে পুষ্পের সমারোহ, দিঘিজলে হংসশ্রেণি, জ্যোৎস্নালোকিত স্নিগ্ধ আকাশ। কুবেরের অট্টালিকা ও অলকার সৌন্দর্য বর্ণনার শেষে যক্ষপ্রিয়ার রূপমাধুরীর বর্ণনাতে কবি নৈপুণ্যের স্বাক্ষর রেখেছেন।
৩০. যক্ষ কে? অথবা, যক্ষের পরিচয় দাও।
➛ যক্ষ ছিল কুবেরের অধীনস্থ ভৃত্য, তার উদ্যানরক্ষক। যক্ষের দায়িত্ব ছিল নিত্যপূজার জন্য ফুল সংগ্রহ করা। কিন্তু সদ্যবিবাহিত ও পত্নীচিন্তায় বিভোর যক্ষ নিজের দায়িত্ব পালনে অবহেলা করে এবং এক বছরের জন্য রামগিরি পর্বতে নির্বাসনের শাস্তি প্রাপ্ত হয়।
৩১. যক্ষকে কে অভিশাপ দেন এবং কেন?
অথবা, যক্ষকে কেন নির্বাসিত করা হয়েছিল?
➛ যক্ষকে অভিশাপ দিয়েছিলেন ধনপতি কুবের। নিজ কর্তব্যকর্মে অবহেলার জন্য প্রভু কুবের কর্তৃক যক্ষ অভিশাপ প্রাপ্ত হয় ৷
৩২. যক্ষকে কোথায় এবং কত দিনের জন্য নির্বাসিত করা হয়েছিল?
অথবা, 'मेघदूत'-এ যক্ষ কোন পবর্তে বাস করত?
➛ যক্ষকে রামগিরি পর্বতে নির্বাসিত করা হয়েছিল। যক্ষ এক বছরের জন্য নির্বাসিত হয়েছিল।
৩৩. যক্ষপত্নী কোথায় থাকেন? স্থানটির বর্ণনা দাও।
➛ যক্ষপত্নী অলকাপুরীতে থাকেন। কৈলাস পর্বতের নিকটে ধনপতি কুবেরের রাজধানী অলকাপুরী। রামগিরি পর্বত থেকে সুদূর উত্তরে অলকাপুরীতে যক্ষের প্রিয়ার কাছে মেঘকে যেতে হবে। এই নগরীর অট্টালিকাগুলি শিবের মস্তকস্থিত চাঁদের আলোয় জ্যোৎস্নাবিধৌত হয়ে থাকে।
৩৪. অলকাধিপতি বা ধনপতি কে? 'মেঘদূত'-এ অলকাপুরীর প্রসঙ্গ কেন এসেছে?
➛ অলকাধিপতি হলেন কুবের। যক্ষের পত্নী অলকাপুরীতে থাকেন। মেঘকে যক্ষের কুশলসংবাদ নিয়ে যেতে হবে অলকাপুরীতে বসবাসরত যক্ষপত্নীর কাছে৷ তাই ‘মেঘদূত’-এ অলকাপুরীর প্রসঙ্গ এসেছে।
৩৫. 'मेघदूत' কাব্যের কয়েকটি টীকা ও টীকাকারের নাম লেখো।
➛ ‘মেঘদূত’ কাব্যের উল্লেখযোগ্য কয়েকটি টীকা ও টীকাকার হলেন দক্ষিণাবর্তনাথের ‘প্রদীপ', স্থিরদেবের ‘বালবোধিনী', জগদ্বরের ‘রসদীপিকা', পরমেশ্বরের ‘সুমনোত্তরী’, বিজয়সূরিগণির ‘সুখবোধিকা’, ভরতমল্লিকের (ভরতসেন) সুবোধ প্রভৃতি।
৩৬. মেঘদূতের সাহিত্যিক মূল্য কতখানি তা নিজের ভাষায় সংক্ষিপ্ত চিত্রাঙ্কন করো।
➛ মেঘদূত গীতিকাব্যটি প্রেমমূলক ও শৃঙ্গার রসযুক্ত। শৃঙ্গার রসের দুটি ভাগ-সম্ভোগ ও বিপ্রলম্ভ, প্রথমটি মিলনের এবং দ্বিতীয়টি বিচ্ছেদের। তবে তা চিরবিচ্ছেদের নয়, প্রিয়াকে ফিরে পাওয়ার আশা বয়ে বেড়ানোর বিচ্ছেদ। মহাকবি তাঁর অলৌকিক প্রতিভাবলে এই দৌত্য কাহিনিকে এক অমর গীতিকাব্যরূপে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তিনি পূর্বমেঘের বিচিত্র সৌন্দর্য পরিক্রমা করে মেঘদূতকে উত্তরমেঘে অলকার কল্পলোকের নিত্য সৌন্দর্যে অধিষ্ঠিত করেছেন।
৩৭. যক্ষ কোন সময় আকাশে মেঘ দেখেছিল? মেঘকে কোন ফুল দিয়ে স্বাগত জানিয়েছিল?
➛ যক্ষ আষাঢ়ের প্রথম দিনে মতান্তরে শেষ দিনে আকাশে মেঘ দেখেছিল। যক্ষ কুরচি ফুলের অর্ঘ্য সাজিয়ে মেঘকে স্বাগত জানিয়েছিল।
৩৮. যক্ষ কাকে দূত করেছিল? তাকে দূত হিসেবে নির্বাচনের কারণ কী?
➛ যক্ষ দূত বা বার্তাবহক হিসেবে মেঘকে নির্বাচন করেছিল। মেঘ অনুকূল বাতাসের সাহায্যে চালিত হয়ে খুব দ্রুত অলকাপুরীতে অবস্থানকারী যক্ষপত্নীর নিকট যক্ষের সংবাদ পৌঁছে দিতে পারবে বলে একে ‘দূত' বলে নির্বাচন করা হয়েছে।
গদ্য | |
---|---|
প্রতিজ্ঞাসাধনম্ (অম্বিকাদত্তব্যাস) | Click Here |
পদ্য | |
ঋতুচর্যা (মহর্ষি চরক) | Click Here |
দৃশ্যকাব্য | |
দানবীরঃ কর্ণঃ – (মহাকবি ভাস) | Click Here |
ব্যাকরণ | |
সন্ধি | Click Here |
শব্দরূপ | Click Here |
প্রত্যয় | Click Here |
ধাতুরূপ | Click Here |
সংস্কৃত সাহিত্যের ইতিহাস | |
বৈদিক সাহিত্য | Click Here |
বৈয়াসিক-মহাভারত | Click Here |
সংস্কৃত গীতিকাব্য | Click Here |
❐ সংস্কৃত সাহিত্যের ইতিহাস (সংস্কৃত গীতিকাব্য)
মার্ক - ৪ পরীক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ সাজেশন নোটস
১. Lyric বা গীতিকাব্য বলতে কী বোঝো? সংস্কৃত সাহিত্যের ইতিহাসে যে-কোনো দুটি গীতিকাব্যের বিষয়ে সংক্ষেপে আলোচনা করো।
❏ গীতিকাব্য : ইংরেজিতে ‘Lyric' শব্দটি এসেছে ‘Lyre’ শব্দ থেকে, যার অর্থ হল বীণা বা তজ্জাতীয় বাদ্যযন্ত্র অর্থাৎ Lyre বা বীণার মতো তারযন্ত্রে সুর সহযোগে যে গান গাওয়া হয়, সেটিকেই ‘গীতিকাব্য' বলে। বিশ্বকবির ভাষায়, ‘যে গান কানে যায় না শোনা, সে গান যেথায় নিত্য বাজে।”
✹ গীতিকাব্যের বর্ণনা : সংস্কৃত সাহিত্যের ইতিহাসে প্রেমমূলক এবং ভক্তিমূলক গীতিকাব্য হিসেবে যে দুটি উল্লেখযোগ্য, সেগুলি হল—কালিদাসের ‘মেঘদূত' এবং জয়দেবের ‘গীতগোবিন্দ’। ‘মেঘদূত' কালিদাসের শ্রেষ্ঠ কাব্য। রামায়ণে রামচন্দ্র কর্তৃক সীতার নিকট হনুমানকে দূতরূপে প্রেরণের ঘটনা— মেঘদূতের উৎস। ছন্দ-মন্দাক্রান্তা, শ্লোকসংখ্যা-১১৮টি (মতান্তরে ১২১টি)। কর্তব্য অবহেলার জন্য পর্বতে নির্বাসিত যক্ষের প্রিয়ামিলনের জন্য ব্যাকুলতা ছিল ‘মেঘদূত’-এর বিষয়বস্তু। এর ২টি খণ্ড-পূর্বমেঘ ও উত্তরমেঘ। পূর্বমেঘে রয়েছে মেঘের যাত্রাপথের আনন্দ এবং বিস্ময়পূর্ণ সুন্দর বর্ণনা। উত্তরমেঘের কেন্দ্রবিন্দুতে আছে অলকাপুরী, সৌন্দর্যের এক স্বপ্নপুরী। মেঘকে দূতরূপে প্রেরণের ফলে এটি একটি দূতকাব্য। ক্ষুদ্র গণ্ডি পেরিয়ে অমৃতলোকে মিলনের চিরন্তনবাণী অভিব্যক্ত হয়েছে মেঘদূত-এ। মানবিক আবেদন গভীর ও তাৎপর্যময়।
✹ গীতগোবিন্দ : খ্রিস্টীয় দ্বাদশ শতকের কবি জয়দেবের ‘গীতগোবিন্দ’ ১২টি সর্গবিশিষ্ট। রাধাকৃষ্ণের দিব্যপ্রেমই গীতগোবিন্দের বিষয়বস্তু। অন্য গোপিনীদের সঙ্গে প্রেমলীলার ফলে বিরহিণী রাধার মানভঞ্জনের জন্য শ্রীকৃষ্ণ অনুনয় করলে শ্রীরাধিকা সমস্ত মান-অভিমান ভুলে কৃষ্ণের সঙ্গে মিলিত হন। সহজ-সরল শব্দসুষমা এবং ছন্দের লালিত্য চোখে পড়ে। অলৌকিক ভাগবতপ্রেম, নাট্যগুণ এবং লৌকিক প্রণয়কাব্যের পরিমণ্ডল লক্ষ করা যায়। রাধা-কৃষ্ণের চটুল প্রণয়ের রীতি, ভাব এবং আঙ্গিক হুবহু সংস্কৃত মহাকাব্য ধারার অনুকরণীয়।
২. মহাকবি কালিদাস রচিত ‘মেঘদূত' বিষয়ে সংক্ষেপে আলোচনা করো।
অথবা, কালিদাসের 'ঘন' কাব্যের বিষয়বস্তু সংক্ষেপে বর্ণনা করো।
➛ মহাকবি কালিদাস বিরচিত ‘মেঘদূত’ গীতিকাব্য একটি অপূর্ব সৃষ্টি।
❏ বিষয়স্তু : ‘মেঘদূত’ গীতিকাব্যটিতে কবিহৃদয়ের বিরহবেদনা প্রতি শ্লোকে প্রকাশিত। এর মূল উপজীব্য বিষয়— প্রিয়সান্নিধ্যের আতিশয্যে কর্তব্যভ্রষ্ট এক যক্ষের অভিশাপপ্রাপ্তি, মেঘকে দূতরূপে প্রেরণ এবং অভিশাপ মোচনের কাহিনি। আনুমানিক মোট ১১৮টি শ্লোকে মন্দাক্রান্তা ছন্দে লেখা ‘মেঘদূত’ দুটি অংশে বিভক্ত—পূর্বমেঘ এবং উত্তরমেঘ।
❏ পূর্বমেঘ : নিজ কর্তব্য অবহেলার জন্য যক্ষ প্রভু কুবেরের আদেশে বারো মাসের জন্য সুদূর রামগিরি পর্বতে নির্বাসিত হয়।
কশ্চিৎকান্তা বিরহগুরুণা স্বাধিকারপ্রমত্তঃ।
শাপেনাস্তংগমিতমহিমা বৰ্ষভোগ্যেণ ভর্তুঃ।'
নির্বাসনের আট মাস অতিবাহিত হওয়ার পর প্রিয়ামিলনের জন্য উৎসুক যক্ষ চেতন-অচেতন জ্ঞানশূন্য হয়ে আষাঢ়ের মেঘকে দূত হিসেবে নিযুক্ত করেছে—
‘আষাঢ়স্য প্রথমদিবসে মেঘমাশ্লিষ্টসানুং
বপ্রক্রীড়া পরিণতগজপ্রেক্ষণীয়ং দদৰ্শ৷’
অলকাপুরীতে প্রিয়তমার কাছে নিজের কুশলসংবাদ প্রেরণই হল যক্ষের উদ্দেশ্য। এই প্রসঙ্গেই কবি মেঘের যাত্রাপথের অপূর্ব ভৌগোলিক চিত্র উপস্থাপিত করেছেন যা পূর্বমেঘের বিষয়বস্তু। প্রকৃতিকবির বর্ণনায় ফুটে উঠেছে বিদিশা নগরীর প্রান্তে বেত্রবতী নদীর, বনচারিণী গ্রাম্যবধূদের প্রীতিস্নিগ্ধ দৃষ্টি তথা ফলের ভারে অবনত আমগাছের অপূর্ব চিত্র।
❏ উত্তরমেঘ : উত্তরমেঘে আছে অলকার অকল্পনীয় সৌন্দর্যমাধুর্যের বর্ণনা, সঙ্গে যক্ষপ্রিয়ার অসামান্য রূপসুষমা এবং অসহ্য বিরহব্যথার কাতরতাও চিত্রিত হয়েছে। যক্ষপ্রিয়ার সৌন্দর্য বর্ণনাতে কবি বলেছেন—'তন্বী শ্যামা শিখরদশনা পবিম্বাধরোষ্ঠী, মধ্যে ক্ষামা চকিতহরিণীপ্রেক্ষণা নিম্ননাভিঃ।' উৎসবের পাশাপাশি যৌবনের লীলাভূমি অলকা। এখানে নিত্য পদ্ম প্রস্ফুটিত, নিত্য জ্যোৎস্নায় অন্ধকার দূর হয়। এখানে শুধুই অনন্ত প্রেম৷ সৌন্দর্য ও প্রেমের অমরাবতীরূপ যক্ষের ভবনে অপেক্ষারত বিরহবিধুরা, মলিনবসনা প্রেয়সীকে মেঘ যক্ষের কুশল বার্তা প্রেরণ করবে এবং পুনরায় মিলনের আশ্বাস প্রদান করে মেঘদূতের পরিসমাপ্তি ঘটে।
৩. 'मेघदूत'- নিয়ে সংক্ষিপ্ত টীকা লেখো।
➛ মহাকবি কালিদাসের লেখনীর এক সুরম্য সৃষ্টি হল ‘মেঘদূত’ গীতিকাব্যটি, যেখানে এক বিরহী যক্ষের হৃদয়ের যন্ত্রণা প্রতিফলিত হয়েছে।
❐ উৎস : ‘মেঘদূত'-এর উৎস হিসেবে কোনো গ্রন্থকে চিহ্নিত করা না হলেও ‘রামায়ণ’ মহাকাব্যে বর্ণিত হনুমানকে সীতার নিকট দূতরূপে প্রেরণের ঘটনাটিই ‘মেঘদূত’ রচনার অনুপ্রেরণা ছিল বলে মনে করা হয়।
❐ বিষয়বস্তু : অলকাধিপতি কুবেরের ভৃত্য যক্ষ কর্তব্যকর্মে অবহেলার জন্য কৈলাস থেকে রামগিরি পর্বতে এক বছরের জন্য নির্বাসিত হন। এই পর্বতে বসবাসকালে যক্ষ চেতন-অচেতন জ্ঞানশূন্য হয়ে অচেতন মেঘকে দূত হিসেবে নিযুক্ত করেন। অলকাপুরীতে প্রিয়তমার কাছে নিজের কুশলসংবাদ প্রেরণই হল যক্ষের উদ্দেশ্য। পূর্বমেঘ-এ যক্ষ মেঘকে অলকাপুরীতে পৌঁছোনোর সুদীর্ঘ পথের বিবরণ দিয়েছেন। এরপর যক্ষ যক্ষপ্রিয়ার অপরূপ সৌন্দর্যের বর্ণনা দিয়েছেন, যাতে অলকাপুরীতে পৌঁছে মেঘ যক্ষপ্রিয়াকে চিনতে পারেন—এটিই উত্তরমেঘ-এর বিষয়বস্তু।
সংস্কৃত সাহিত্যে কালিদাস রচিত 'মেঘদূত' একটি প্রেমমূলক গীতিকাব্য। ভাষার সৌন্দর্য, ভাবের গভীরতা এবং বিষয়বস্তুর সার্বজনীনতায় জনপ্রিয় এই গীতিকাব্যের প্রভাব সুদূরপ্রসারী। পঞ্চাশটির অধিক টীকা, বহু প্রক্ষিপ্ত শ্লোক, আবার এর অনুকরণে প্রায় পঞ্চাশাধিক দূতকাব্যের রচনা এর জনপ্রিয়তার প্রমাণ। এমনকি জার্মান কবি শিলারের ‘মেরিয়া স্টুয়ার্ট’ 'মেঘদূত'-এর অনুকরণে রচিত। এ ছাড়াও ঘটকর্পর-এর ঘটকর্পরকাব্য', ধোয়ীর ‘পবনদূত’, রূপগোস্বামীর উদ্ধবসন্দেশ, ব্রজনাথের 'মনোদূত', বেদান্তদেশিকের ‘হংসসন্দেশ' ইত্যাদি কয়েকটি উল্লেখযোগ্য দূতকাব্য মেঘদূত অবলম্বনে রচিত। মেঘদূতের বিভিন্ন ভাষায় বহু অনুবাদ হয়েছে, যা সমানভাবে সকলের কাছে সমাদৃত।
টীকাকার: ‘মেঘদূত'-এর টীকাকারদের মধ্যে মল্লিনাথ সুরি, বল্লভদেব, স্থিরদেব এবং দক্ষিণাবর্তনাথ উল্লেখযোগ্য।
৪. জয়দেব ও গীতগোবিন্দ সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত টীকা লেখো।
➛‘গীতগোবিন্দ'-এর রচয়িতা ‘কবিরাজরাজ' জয়দেব গোস্বামী ছিলেন লক্ষ্মণ সেনের রাজসভায় উপস্থিত পঞ্চরত্নের মধ্যে অন্যতম। সংস্কৃত সাহিত্যে তিনি ‘পদ্মাবতীচরণচারণচক্রবর্তী' এবং ‘পদ্মাবতীরমণজয়দেব' কবি নামে সুপরিচিত। অজয় নদের তীরবর্তী বীরভূমের কেন্দুবিল্ব গ্রামে তাঁর জন্ম। ‘গীতগোবিন্দ’-এর শেষ শ্লোক থেকে জানা যায়, জয়দেবের পিতার নাম ভোজদেব এবং মায়ের নাম বামাদেবী (পাঠান্তরে রামাদেবী) –
‘শ্রীভোজদেবপ্রভবস্য বামাদেবীসুতশ্রীজয়দেবকস্য।
পরাশরাদিপ্রিয়বন্ধুকণ্ঠে শ্রীগীতগোবিন্দকবিত্বমস্তু৷৷' (১২/২৯)
জয়দেব নিজের স্ত্রী পদ্মাবতীর অপ্রাকৃত প্রেমে অনুপ্রাণিত হয়েই ‘গীতগোবিন্দ' নামক গীতিকাব্যটি রচনা করেছিলেন। জয়দেবের তিরোধান তিথি মকরসংক্রান্তিতে আজও বাউল বৈয়বের মেলা বসে।
❐ কাব্যপ্রতিভা : মানব-মানবীর ভালোবাসার শ্রেষ্ঠ সার্থক এবং সুন্দরতম পরিণতিরূপে ভক্তকবি ভাগবত প্রেমের কথা বলেছিলেন। ড. সুশীলকুমার দে যথার্থই বলেছেন—‘কবির রাধা শুধু তাঁহার কল্পনারূপিণী নহেন, তাঁহার জীবনের সমস্ত অনুভূতি ও প্রীতির বাস্তবলম্বী'।
❐ গীতগোবিন্দ : দ্বাদশ সর্গবিশিষ্ট ‘গীতগোবিন্দ' মিলনান্তক ভক্তিমূলক গীতিকাব্য। ২৪টি গীত এবং ৮০টি শ্লোকসমন্বয়ে রাধিকা এবং শ্রীকৃষ্ণের দিব্যপ্রেমই এর বিষয়বস্তু। প্রথম সর্গে শ্রীরাধিকা কৃষ্ণবিরহে ব্যাকুল, দ্বিতীয় সর্গে উভয়ের বিরহব্যাকুলতা ও মিলনের জন্য উৎকণ্ঠা, তৃতীয় সর্গে শ্রীকৃষ্ণের চিন্তা, চতুর্থ সর্গে কৃষ্ণের কাছে সখীর মাধ্যমে রাধার অবস্থা নিবেদন, পঞ্চম সর্গে রাধার জন্য কৃষ্ণের প্রতীক্ষা, ষষ্ঠ সর্গে শ্রীকৃষ্ণের বার্তার প্রতিফলন, সপ্তম সর্গে শ্রীরাধিকার ব্যাকুলতা, অষ্টম সর্গে রাধার মান, নবম সর্গে রাধার মানভঞ্জনের চিন্তায় কৃয়ের ব্যাকুলতা, দশম সর্গে রাধার প্রতি কৃয়ের অনুনয় — 'স্মরগরলখণ্ডনং মম শিরসি মণ্ডনং দেহি পদপল্লবমুদারম্’, একাদশ সর্গে উভয়ের মিলন সম্ভাবনায় উল্লাস এবং দ্বাদশ সর্গে রাধাকৃষ্ণের মিলনবিলাস বর্ণিত হয়েছে।
গীতগোবিন্দের পদাবলি শ্রুতিমধুর এবং কোমল শব্দের বাঁধনে মনোরঞ্জক। অলৌকিক ভাগবত প্রেমের তত্ত্ব, নাট্যগুণ এবং লৌকিক প্রণয়কাব্যের পরিমণ্ডল—এই ত্রিগুণাত্মক বৈশিষ্ট্য চোখে পড়ে। সার্বজনীনভাবে সমাজের স্তরভেদে কাব্যটি বিখ্যাত।
৫. সংস্কৃত সাহিত্যের ইতিহাসে কবি জয়দেবের অবদান কতখানি আলোচনা করো।
❐ জয়দেব লক্ষ্মণ সেনের রাজসভায় উপস্থিত পঞ্চরত্নের মধ্যে একজন। রাধাকৃষ্ণের লীলাতত্ত্বের সর্বপ্রথম নিপুণ পথপ্রদর্শক এবং বৈষ্ণব সাধক ছিলেন তিনি। রাধাকৃষ্ণের শাশ্বত প্রেমলীলাকে উপজীব্য করে কবি জয়দেব ‘গীতগোবিন্দ’ কাব্যটি রচনা করেন।
❐ অবদান: ① প্রাচীন ভাষা ও সাহিত্যের পুনর্জন্ম : জনসাধারণের মধ্যে প্রাচীন সংস্কৃত ভাষা ও সাহিত্যিক পুনরুজ্জীবনের প্রচেষ্টাস্বরূপ ‘গীতগোবিন্দ’ গীতিকাব্যটি রচিত। ② ভক্তিরসের মর্যাদায় উন্নীত : সাহিত্য, সংগীত এবং ভক্তিরসের মর্যাদায় গীতিকাব্যটি রচিত। জয়দেবের ‘গীতগোবিন্দ' অনুসারী দুটি গীতিকাব্য হল—রামকবির ‘গীতরাঘব’ এবং বংশমুনির ‘গীতদিগম্বর' ③ মঙ্গলকাব্যে প্রভাব : ‘গীতগোবিন্দ’ দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েই মঙ্গলকাব্যে দলবেঁধে পালা গানের রীতি প্রচলিত হয়েছিল। ④ সংগীতে প্রভাব : কীর্তনগানের সর্বব্যাপী প্রসারের মূল কারণ গীতগোবিন্দ। ⑤ লৌকিক প্রণয় কাহিনি : প্রণয়ের উপাদান, আঙ্গিক, চরিত্র চিত্রণ, ভাবপ্রবাহ সর্বত্রই লৌকিক প্রেমকবিতার বাতাবরণ এবং ক্ষীণভক্তিরসের সুর শুনতে পাওয়া যায়। কাব্যের প্রস্তাবনায় ভক্তকবি লৌকিক প্রণয় এবং ভগবদ্ ভক্তির অসামান্য মেলবন্ধন ঘটিয়েছিলেন। ⑥ ছন্দলালিত্য : জয়দেবের অনুসৃত ছন্দের প্রভাব পরবর্তী বাংলা সাহিত্যে প্রতিফলিত হয়েছে।
‘বিহরতি হরিরিহ সরসবসস্তে।
হরিরিতি হরিরিতি জপতি সকামম্।
বিরহবিহিতমরণের নিকামম্।।'
পঙ্ক্তিগুলি পাঠ করলেই বাংলা ভাষার সনাতন পয়ার এবং ত্রিপদী ছন্দের আদিরূপের কথা মনে পড়ে। পদলালিত্যে, ছন্দসুষমায়, অর্থব্যঞ্জনায় ও শাশ্বত সৌন্দর্যের চিত্রকল্পে বাংলার কবি জয়দেব ছিলেন সিদ্ধহস্ত।
৬. সংস্কৃত ভক্তিমূলক গীতিকাব্যের নিদর্শনরূপে গীতগোবিন্দ -এর মূল্যায়ন করো।
➛ ১২টি সর্গে বিভক্ত, শৃঙ্গাররসপ্রধান ‘গীতগোবিন্দ' সংগীত, শিল্পকলা এবং ভক্তিরসের বিশিষ্টতায় ভারতব্যাপী প্রসিদ্ধ।
❐ ভক্তিমূলক গীতিকাব্য : ‘গীতগোবিন্দ’ গীতিকাব্যটি শ্রীরাধা ও শ্রীকৃষ্মের মাধুর্যময়ী প্রেমলীলা বিষয়েই আলোকপাত করেছে। সাহিত্য, সংগীত ও ভক্তিরসের মর্যাদায় গীতিকাব্যটি এক উজ্জ্বলতম দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। রাধা, কৃষ্ণ ও তার সখীদের কথোপকথন, প্রেমিক-প্রেমিকার নানান অবস্থা এবং ভাব ও প্রকৃতি বর্ণনার ব্যঞ্জনায় কাব্যটি রচিত। তাই একে ‘ভক্তিমূলক গীতিকাব্য'-এর সঠিক নিদর্শন বলা যায়।
❐ মূল্যায়ন : ‘গীতগোবিন্দ'-এর কবি জয়দেবের বাস্তব অনুভূতিই অবাস্তব প্রেমগাথা এবং সৌন্দর্যের কল্পলোককে বাস্তবে রূপায়িত করেছে। তাঁর কোমলকান্ত পদাবলিতে সহজ-সরল শব্দসুষমা এবং ছন্দের লালিত্য চোখে পড়ে, যেমন—‘ধীর-সমীরে যমুনাতীরে বসতি বনে বনমালী।' তাই এই কাব্যের মূল্যায়ন প্রসঙ্গে এর তিনটি বৈশিষ্ট্য আমাদের লক্ষণীয়— অলৌকিক ভাগবত প্রেমের তত্ত্ব, নাট্যগুণ এবং লৌকিক প্ৰণয়কাব্যের পরিমণ্ডল। ভক্ত সমালোচকদের কাছে জয়দেবের ‘গীতগোবিন্দ' মর্ত্যপ্রেমের মধ্য দিয়ে দেহাতীত দিব্যপ্রেমের এক বার্তা বহন করে
এনেছে। কৃষ্ণ পরমাত্মা, তাঁর সঙ্গে জীবাত্মারূপে লীলা করছেন শ্রীরাধিকা। পরমাত্মার সঙ্গে জীবাত্মার মিলন ঘটেছে। ধর্মকেন্দ্ৰিক এই প্রণয়কাহিনি সার্বজনীনভাবে সমাজের বিভিন্ন স্তরে জনপ্রিয় হয়েছিল। প্রেমের আকুতি, মিলনের আকুলতা, বিরহের দৈন্য এবং সম্ভোগের অকৃত্রিম বর্ণনা ভক্তকবি জয়দেবের লেখনীর স্পর্শে যেন প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছে। তাই শাশ্বত সৌন্দর্যের এই চিত্রশিল্পী সম্পর্কে সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত বলেছেন—
‘বাংলার রবি জয়দেব কবি কান্তকোমল পদে।
করেছে সুরভি সংস্কৃতের কাঞ্চন-কোকনদে।'
‘গীতগোবিন্দম্’ কাব্যে বৈষ্ণব সাধনার উপকরণ হিসেবে পুরীর জগন্নাথ মন্দিরে নৃত্যের সঙ্গে ‘গীতগোবিন্দ'-এর গানের পরিবেশন কাব্যটিকে এক অনন্য মাত্রা দান করেছে।