নবম শ্রেণি ইতিহাস অধ্যায় ২ : বিপ্লবী আদর্শ, নেপোলিয়নীয় সাম্রাজ্য ও জাতীয়তাবাদ

Esita Afrose
0
১. কেন নেপোলিয়নকে বলা হয় 'বিপ্লবের ধ্বংসকারী'?
➛ নেপোলিয়নকে বলা হয় ‘বিপ্লবের ধ্বংসকারী'। কারণ তিনি ফরাসি বিপ্লবের মহান আদর্শ স্বাধীনতাকে কুক্ষিগত করে ফরাসিদের ব্যক্তিস্বাধীনতা, বাকস্বাধীনতা ইত্যাদি খর্ব করেছিলেন।

২. “কোড নেপোলিয়ন' কী?
➛ সমগ্র ফরাসি সাম্রাজ্যে একই ধরনের আইনকানুন প্রচলনের জন্য সম্রাট নেপোলিয়নের উদ্যোগে ফ্রান্সের চারজন বিশিষ্ট আইনজীবীকে নিয়ে গঠিত এক কমিশন চার বছরের অক্লান্ত পরিশ্রম দ্বারা 1804 খ্রিস্টাব্দে বিভিন্ন আইন সংকলন করে যে বিধিবদ্ধ ফরাসি আইন রচনা করেন তা 1807 খ্রিস্টাব্দে নেপোলিয়নের নামানুসারে ‘কোড নেপোলিয়ন' বা 'নেপোলিয়নের আইন সংহিতা' নামে পরিচিত হয়। 2287টি বিধিসম্বলিত এই আইনসংহিতা তিনটি ভাগে বিভক্ত ছিল, যথা—দেওয়ানি বিধি, ফৌজদারি বিধি ও বাণিজ্যিক বিধি। 

৩. মহাদেশীয় ব্যবস্থা কেন ব্যর্থ হয়েছিল?
➛ নেপোলিয়নের মহাদেশীয় ব্যবস্থা বা মহাদেশীয় অবরোধ ব্যবস্থা ব্যর্থ হওয়ার কারণগুলি ছিল—(ক) ইংল্যান্ডের শক্তিশালী নৌবাহিনীর তুলনায় ফ্রান্সের নৌশক্তি ছিল দুর্বল, (খ) ফ্রান্সের ভৌগোলিক সীমারেখার অসুবিধা এবং (গ) ফ্রান্সের শিল্পজাত পণ্যসামগ্রী ইংল্যান্ডের শিল্পপণ্যের গুণগত মানের তুলনায় ছিল নিম্নমানের।

৪. ট্রাফালগারের যুদ্ধ কবে, কাদের মধ্যে হয় ?
➛ ১৮০৫ খ্রিস্টাব্দে ফ্রান্স এবং ইংল্যান্ডের মধ্যে ট্রাফালগারের যুদ্ধ হয়।

৫. ‘কনফেডারেশন অফ দ্য রাইন কী? এর প্রতিষ্ঠাতা কে?
অথবা, ‘রাইন কনফেডারেশন' কী ?
অথবা, রাইন রাষ্ট্রসংঘ কী ?
অথবা, কনফেডারেশন অফ রাইন' কী?
➛  ফ্রান্সের শাসক নেপোলিয়ন ১৮০৬ খ্রিস্টাব্দে জার্মানির ব্যাভেরিয়া, ব্যার্ডেন উরটেমবার্গ, হেসবার্গ প্রভৃতি ছোটো ছোটো রাজ্যগুলিকে দখল করেন। এরপর সেই রাজ্যগুলিকে একত্রিত করে একটি কনফেডারেশন বা রাষ্ট্র সমবায় গঠন করেন। এটিই 'কনফেডারেশন অফ রাইন' বা 'রাইন কনফেডারেশন' নামে পরিচিত।

৬. মহাদেশীয় অবরোধ ব্যবস্থা বলতে কী বোঝো?
অথবা, মহাদেশীয় ব্যবস্থা কাকে বলে ?
অথবা, মহাদেশীয় ব্যবস্থা বলতে কী বোঝো?
অথবা, মহাদেশীয় অবরোধ বা কন্টিনেন্টাল সিস্টেম কী ?
➛ ফ্রান্সের শাসক নেপোলিয়ন বার্লিন ডিক্রি, মিলান ডিগ্রি, ওয়ারশ ডিক্রি, ফন্টের ডিক্রি প্রভৃতি জারির মাধ্যমে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক অবরোধের কথা ঘোষণা করেন। এই অবরোধের দ্বারা তিনি ইংল্যান্ডের কোনো জাহাজকে ইউরোপের কোনো বন্দরে প্রবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। এ ছাড়া ইউরোপের কোনো দেশ ইংল্যান্ডের বন্দরে প্রবেশ এবং সেখান থেকে পণ্য আমদানি করার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেন।
নেপোলিয়নের গৃহীত এই নীতিটিই মহাদেশীয় অবরোধ ব্যবস্থা বা মহাদেশীয় ব্যবস্থা, নামে পরিচিত।

৭. 'বাৰ্লিন ডি' কী?
অথবা, বার্লিন ডিক্রিতে কী বলা হয় ?
➛ ১৮০৬ খ্রিস্টাব্দে নেপোলিয়ন বার্লিন ডিক্রি জারি করেন এতে তিনি জানান – (ক) ইংল্যান্ড বা তার উপনিবেশগুলি এবং তার মিত্রদেশ থেকে আগত পণ্যবাহী জাহাজগুলিকে ফ্রান্স বা তার মিত্রদেশ এবং নিরপেক্ষ দেশের বন্দরে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না এবং (খ) ওইসব দেশের কোনো জাহাজেকরে ব্রিটিশ পণ্য প্রবেশ করানো হলে ফ্রান্স সেগুলি বাজেয়াপ্ত করবে।

৮. 'অডার্স-ইন-কাউন্সিল' কী?
➛ নেপোলিয়নের 'বার্লিন ডিক্রি'-র বিরুদ্ধে ইংল্যান্ড ১৮০৭ খ্রিস্টাব্দের ১১ নভেম্বর একটি ঘোষণাপত্র জারি করে। এটি ‘অর্ডার্স-ইন-কাউন্সিল' নামে পরিচিত। এই ঘোষণাপত্রে বলা হয় কোনো দেশের পণ্যবাহী জাহাজ ফ্রান্স বা তার মিত্রদেশগুলির বন্দরে প্রবেশ করতে পারবে না। এই সকল দেশের বন্দরে প্রবেশ করতে হলে ইংল্যান্ডকে শুল্ক প্রদান করতে হবে। এই ঘোষণায় আরও জানানো হয় এটি অস্বীকার করলে ইংল্যান্ড সেই দেশের পণ্যবাহী জাহাজ বাজেয়াপ্ত করবে।

৯. 'মিলান ডিগ্রি' কী?
➛ ইংল্যান্ড কর্তৃক ঘোষিত 'অর্ডার্স-ইন-কাউন্সিল'-এর বিরুদ্ধে ১৮০৭ খ্রিস্টাব্দের ১৭ ডিসেম্বর নেপোলিয়ন একটি ঘোষণাপত্র জারি করেন। এই ঘোষণায় বলা হয় ফ্রান্সের কোনো মিত্ররাষ্ট্র বা কোনো নিরপেক্ষ দেশ ইংল্যান্ড বা তার মিত্ররাষ্ট্রের কোনো বন্দরে জাহাজ প্রেরণ করলে বা ইংল্যান্ডকে কোনো প্রকার শুল্ক দিলে সেই রাষ্ট্র ফ্রান্সের শত্রু হিসেবে বিবেচিত হবে। এমতাবস্থায় ফ্রান্স সেই জাহাজের পণ্যসামগ্রী বাজেয়াপ্ত করবে। এই ঘোষণা ‘মিলান ডিক্রি' নামে পরিচিত।

১০. ফন্টেন ব্লু-র সন্ধি কবে স্বাক্ষরিত হয়?
অথবা, ফন্টেন ব্লু-র সন্ধি কবে ও কাদের মধ্যে স্বাক্ষরিত হয় ?
➛ পোর্তুগাল নেপোলিয়ন কর্তৃক ঘোষিত মহাদেশীয় অবরোধ ব্যবস্থা মানতে অস্বীকার করে। এমতাবস্থায় পোর্তুগালকে শাস্তি দেওয়ার উদ্দেশ্যে নেপোলিয়ন ১৮০৭ খ্রিস্টাব্দে স্পেনের সঙ্গে ফন্টেন ব্লু-র সন্ধি স্বাক্ষর করেন।

১১. ‘ফন্টেন ব্লু-র সন্ধি'-র শর্তগুলি কী ছিল?
➛ ১৮০৭ খ্রিস্টাব্দে ফ্রান্স ও স্পেনের মধ্যে স্বাক্ষরিত ‘ফন্টেন ব্লু সন্ধি'-র প্রধান শর্তগুলি ছিল—(ক) বিরোধী পোর্তুগালকে শাস্তি দেওয়ার জন্য ফ্রান্স ও স্পেনের যৌথবাহিনী পোর্তুগাল আক্রমণ করবে, (খ) যুদ্ধান্তে পোর্তুগালের অধিকৃত অঞ্চল ফ্রান্স ও স্পেন উভয়ে ভাগ করে নেবে।

১২. চতুর্থ শক্তিজোট কারা গঠন করে?
অথবা, চতুর্থ রাষ্ট্রজোট বলতে কী বোঝো?
➛ ১৮১৩ খ্রিস্টাব্দে ইংল্যান্ড, রাশিয়া, অস্ট্রিয়া, প্রাশিয়া, সুইডেন প্রভৃতি দেশ ফরাসি শাসক নেপোলিয়নের ক্ষমতা খর্ব করার উদ্দেশ্যে ফ্রান্স বিরোধী চতুর্থ রাষ্ট্রজোট গঠন করেছিল।

১৩. উপদ্বীপের যুদ্ধ বলতে কী বোঝায়?
অথবা, উপদ্বীপের যুদ্ধ কী?
➛ স্পেনে রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলার সুযোগ নিয়ে ফ্রান্সের শাসক নেপোলিয়ন সেটি দখল করে নিজ ভাই জোসেফকে সেখানকার সিংহাসনে বসান। এই ঘটনায় স্পেনবাসী ক্ষুব্ধ হয়ে ফ্রান্সের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়। অনতিবিলম্বে ইংল্যান্ড এবং পোর্তুগাল স্পেনের পক্ষে এই যুদ্ধে যোগদান করে। ফ্রান্সের বিরুদ্ধে ১৮০৮–১৮১৪ খ্রিস্টাব্দ সময়কালে স্পেন, ইংল্যান্ড ও পোর্তুগালের সম্মিলিত বাহিনীর এই যুদ্ধটি ‘উপদ্বীপের যুদ্ধ’ নামে পরিচিত। এই যুদ্ধে শেষপর্যন্ত ফ্রান্সের পরাজয় ঘটে এবং জোসেফ স্পেনের সিংহাসন ত্যাগ করতে বাধ্য হন।

১৪. নেপোলিয়ন উপদ্বীপের যুদ্ধকে ‘স্পেনীয় ক্ষত' বলেছেন কেন?
➛ উপদ্বীপের যুদ্ধে স্পেন, ইংল্যান্ড ও পোর্তুগালের যৌথ বাহিনীর কাছে ফ্রান্সের পরাজয় ঘটায় নেপোলিয়নেরও ভাবমূর্তি নষ্ট হয়। উক্ত যুদ্ধে পরাজয়ের ফলে ফ্রান্সের সামরিক ও আর্থিক ক্ষতি হয়, যেটি পরবর্তীকালে নেপোলিয়নের পতনের অন্যতম কারণ রূপে দেখা দিয়েছিল। এই কারণে তিনি উক্ত যুদ্ধটিকে ‘স্পেনীয় ক্ষত’ বলেছেন।

  Read More - IX History Click ☟    
অধ্যায় ১ : ফরাসি বিপ্লবের কয়েকটি দিক


১৫. ‘স্পেনীয় ক্ষত' কী?
অথবা, স্পেনীয় ক্ষত বলতে কী বোঝো?
➛ নেপোলিয়ন নিজ ভ্রাতা জোসেফকে স্পেনের সিংহাসনে বসালে স্পেনবাসীর আত্মমর্যাদা ও জাতীয়তাবোধে তীব্র আঘাত লাগে এবং পোর্তুগালের সঙ্গে মিলিত হয়ে স্পেনবাসী নেপোলিয়নের বিরুদ্ধে সংগ্রামে অবতীর্ণ হয়।উপদ্বীপের যুদ্ধে নেপোলিয়নের পরাজয়ের ফলে আর্থিক ক্ষতির সঙ্গে সঙ্গে সারা ইউরোপে প্রবল উদ্দীপনার সঞ্চার হয় এটিই ‘স্পেনীয় ক্ষত' নামে পরিচিত।

১৬. নেপোলিয়ন কেন রাশিয়া আক্রমণ করেন?
➛ রাশিয়ার জার প্রথম আলেকজান্ডার ফ্রান্সের সঙ্গে স্বাক্ষরিত টিলজিটের সন্ধি (১৮০৭ খ্রিস্টাব্দ) ভঙ্গ করে ইংল্যান্ডের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক গড়ে তোলেন। এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ ফ্রান্সের শাসক নেপোলিয়ন ১৮১২ খ্রিস্টাব্দে গ্র্যান্ড আর্মি নিয়ে রাশিয়া আক্রমণ করেন।

১৭. নেপোলিয়নের 'গ্রাদ আর্মি' কী?
➛ ফরাসি শাসক নেপোলিয়নের শক্তিশালী সেনাবাহিনী ‘গ্রাঁদ আমি’ (গ্র্যান্ড আর্মি) নামে পরিচিত ছিল। এই সেনাবাহিনী দ্বারা তিনি বহু যুদ্ধে জয়লাভ করলেও রাশিয়া অভিযানে এটি বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল।

১৮. পোড়ামাটি নীতি কী?
অথবা, পোড়ামাটি নীতি বলতে কী বোঝো?
অথবা, ফ্রান্সের বিরুদ্ধে রাশিয়া কর্তৃক গৃহীত ‘পোড়ামাটি নীতি' কী?
➛ ১৮১২ খ্রিস্টাব্দে ফ্রান্স রাশিয়া আক্রমণ করলে রাশিয়া সম্মুখ সংঘর্ষ এড়িয়ে ক্রমশ পিছু হটতে থাকে এবং সেই সঙ্গে রাস্তাঘাট, সেতু, ঘরবাড়ি ধ্বংস করে, শস্যক্ষেত্রে অগ্নিসংযোগ করে এবং পানীয় জলে বিষ মিশিয়ে দেয়। এই নীতি পোড়ামাটি নীতি নামে পরিচিত ছিল। এর ফলে রাশিয়ার সৈন্যদের পশ্চাতে আসা ফরাসি বাহিনী ব্যাপক সমস্যার সম্মুখীন হয়।

১৯. কোন যুদ্ধকে ও কেন জাতিসমূহের যুদ্ধ বলা হয়?
অথবা, কোন যুদ্ধ, কেন জাতিসমূহের যুদ্ধ নামে পরিচিত?
অথবা, লিপজিগের যুদ্ধকে কেন জাতিসমূহের যুদ্ধ বলা হয়?
অথবা, লিপজিগের যুদ্ধকে জাতিসমূহের যুদ্ধ বলা হয় কেন ?
অথবা, জাতিসমূহের যুদ্ধ কোন যুদ্ধকে এবং কেন বলা হয় ?
➛ নেপোলিয়নের আগ্রাসী নীতিতে ক্ষুব্ধ চতুর্থ রাষ্ট্রজোটের ১৩টি রাষ্ট্র একত্রিত হয়ে ফ্রান্সের বিরুদ্ধে লিপজিগের যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়। ১৮১৩ খ্রিস্টাব্দে সংঘটিত এই যুদ্ধে এতগুলি রাষ্ট্র ঐক্যবদ্ধভাবে ফ্রান্সের বিরুদ্ধে উক্ত যুদ্ধে অংশগ্রহণ করায় এটি ‘জাতিসমূহের যুদ্ধ' নামেও পরিচিত হয়। উল্লেখ্য, এই যুদ্ধে নেপোলিয়নের ফ্রান্স পরাজিত হয়।

২০. রাশিয়ার বিরুদ্ধে নেপোলিয়নের ব্যর্থতার কারণ কী ছিল?
➛ রাশিয়ার বিরুদ্ধে নেপোলিয়নের ব্যর্থতার প্রধান কারণ ছিল— (ক) রাশিয়ার তীব্র শৈত্যপ্রবাহে ফরাসি বাহিনী বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। (খ) রাশিয়ার বিশাল ভূখণ্ড ফরাসি বাহিনীর কাছে সম্পূর্ণ অজানা ছিল। (গ) রাশিয়া কর্তৃক গৃহীত গেরিলা যুদ্ধ পদ্ধতিতে ফ্রান্স যথেষ্ট পারদর্শী ছিল না।

২১. নেপোলিয়নের পতনের দুটি কারণ লেখো।
➛  ফ্রান্সের শাসক নেপোলিয়নের পতনের দুটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ ছিল— (ক) উপদ্বীপের যুদ্ধে ফ্রান্সের পরাজয় এবং (খ) রাশিয়া অভিযানের ব্যর্থতা।

২২. ‘শত দিবসের রাজত্ব' কী?
অথবা, 'শত দিবসের রাজত্বকাল – তাৎপর্য ব্যাখ্যা করো।
অথবা, ‘একশত দিবসের রাজত্ব' কী?
অথবা, শত দিবসের রাজত্ব' বলতে কী বোঝো?
অথবা, ‘একশত দিবসের রাজত্ব' বলতে কী বোঝো ?
অথবা, ‘একশো দিনের রাজত্ব' কী?
➛  ফ্রান্স বিরোধী চতুর্থ শক্তিজোটের কাছে পরাজিত নেপোলিয়ন সিংহাসন ত্যাগ করে এলবা দ্বীপে নির্বাসনে যেতে বাধ্য হন। ১৮১৫ খ্রিস্টাব্দের মার্চে ফ্রান্সে অভ্যন্তরীণ গোলযোগের সুযোগে এলবা দ্বীপের নির্বাসন থেকে পালিয়ে স্বদেশে ফিরে আসেন। তাঁর ফ্রান্সে আগমনের সময়কালে তৎকালীন ফরাসি শাসক অষ্টাদশ লুই সেদেশ থেকে পালিয়ে যান। এমত পরিস্থিতিতে নেপোলিয়ন ১৮১৫ খ্রিস্টাব্দের ২০ মার্চ থেকে ২৯ জুন সময়কাল অর্থাৎ, মোট ১০০ দিন ফ্রান্সে রাজত্ব করেন। যেটি শত দিবসের রাজত্ব' নামে পরিচিত।

২৩. কাকে কেন ‘মধ্যযুগের শার্লেম্যান' বলা হয়?
➛ নেপোলিয়নকে মধ্যযুগের শার্লেম্যান বলা হয়। কারণ তিনি রোমান সম্রাট শার্লেম্যানের (৪০০ খ্রিস্টাব্দ) মতই নানান প্রতিবন্ধকতার মধ্যদিয়ে পোপ কর্তৃক অভিষিক্ত (1804 খ্রিস্টাব্দ) হয়েছিলেন।

২৪. কাকে কেন ‘মুকুটধারী জ্যাকোবিন' বলা হয়?
➛ নেপোলিয়ন বোনাপার্টকে মুকুটধারী জ্যাকোবিন বলা হয়। কারণ, নেপোলিয়ন প্রথম জীবনে একজন জ্যাকোবিন দলের সদস্য ছিলেন। 1804 খ্রিস্টাব্দে সেই জ্যাকোবিন সদস্যকেই পোপ (সপ্তম পায়াস) ইগল চিহ্নিত রোমান মুকুট পরিয়ে ফ্রান্সের সম্রাট পদে বরণ করে নিয়েছিলেন।

২৫. ‘লিজিয়ন অব্ অনার' কী?
➛ নেপোলিয়ন তাঁর রাজকর্মচারীদের উৎসাহিত করতে দক্ষ কর্মচারীদের বিশেষ সম্মান প্রদর্শনের জন্য যে রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ সম্মান দেওয়ার ব্যবস্থা চালু করেন, তাকেই বলা হয় ‘লিজিয়ন অব্ অনার'।

২৬. লাইসি কী?
➛ নেপোলিয়ন ফ্রান্সের প্রত্যেক কমিউনে একটি করে প্রাথমিক বিদ্যালয় গড়ে তোলেন। এর পাশাপাশি প্রতিষ্ঠা করেন একটি করে উচ্চ আবাসিক বিদ্যালয়। এগুলিকেই বলা হত লাইসি। এই লাইসির সংখ্যা ছিল 29টি। এখানে শিক্ষার্থীদের সামরিক শিক্ষারও বন্দোবস্ত ছিল।

২৭.  নেপোলিয়নকে বিপ্লবের ‘অগ্নিময় তরবারি' বলা হয় কেন?
➛ নেপোলিয়নের গুণগ্রাহী ঐতিহাসিকেরা মনে করেন যে, নেপোলিয়ন ছিলেন ‘বিপ্লবের অগ্নিময় তরবারি'। ফরাসি বিপ্লবকালে নেপোলিয়ন বিভিন্নভাবে বিপ্লবকে রক্ষা করেন। নেপোলিয়ন তরবারির সাহায্যে যে সাম্রাজ্য গঠন করেন, সেখানে সামন্ততন্ত্রের অবসান ঘটান, 'কোড নেপোলিয়ন' প্রবর্তন করে আইনগত সাম্য ও যোগ্যতার মর্যাদা প্রতিষ্ঠার ব্যবস্থা করেন এবং ইটালি, জার্মানি প্রভৃতি দেশকে একই শাসনাধীনে এনে সেখানে জাতীয় ঐক্যের আকাঙ্ক্ষা সৃষ্টি করেন। প্রথম কনসাল ও সম্রাটরূপে নেপোলিয়ন ফ্রান্সকে কেন্দ্র করে প্রায় গোটা ইউরোপে ফরাসি সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ফরাসি বিপ্লবের ভাবধারা ছড়িয়ে দেন।

২৮. নেপোলিয়নকে কেন ‘আধুনিক যুগের সিজার' বলা হয়?
➛ নেপোলিয়ন বোনাপার্টকে ‘আধুনিক যুগের সিজার' বলা হয়, কারণ তিনি রোমান সম্রাট জুলিয়াস সিজারের মত এক প্রতিভাধর সামরিক নেতা ও সুশাসক ছিলেন। নেপোলিয়ন সিজারের মতই অভিজাততন্ত্রের অবসান ঘটিয়ে সাধারণ মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।

২৯. কোড নেপোলিয়নকে ফরাসি সাম্রাজ্যের বাইবেল বলা হয় কেন? 
➛ ফ্রান্সের সর্বত্র একই আইন বলবৎ করার জন্য সম্রাট নেপোলিয়ন ‘কোড নেপোলিয়ন' নামে একটি আইনসংহিতা রচনা করেন। এর দ্বারা— ① বিচারপতি নির্বাচনের পরিবর্তে মনোনয়ন করা হয়, ② বেআইনি গ্রেফতার বন্ধ হয় এবং ③ বিচারের ক্ষেত্রে সমতার নীতি প্রতিষ্ঠিত হয়। একারণে এই আইনসংহিতা ফ্রান্স-সহ সমগ্র ফরাসি সাম্রাজ্যে দারুণ সমাদৃত হয়। তাই ঐতিহাসিক লেফেভর একে ফরাসি সাম্রাজ্যের বাইবেল বলে অভিহিত করেছেন।

৩০. ‘ভঁদেমিয়ার ঘটনা' (অক্টোবরের ঘটনা) বলতে কী বোঝো?
অথবা, ভঁদেমিয়ার ঘটনা' বা 'অক্টোবরের ঘটনা কী?
➛ ফরাসি বিপ্লবের পরবর্তী সময়ে ১৭৯৫ খ্রিস্টাব্দের ৫ অক্টোবর রাজতন্ত্রের সমর্থক জনগণ ফ্রান্সের জাতীয় সভা আক্রমণ করলে তৎকালীন ফরাসি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নেপোলিয়ন সামান্য কিছু সংখ্যক সৈন্য নিয়ে জাতীয় সভা রক্ষা করেন। এই ঘটনা ভঁদেমিয়ার ঘটনা বা অক্টোবরের ঘটনা নামে পরিচিত।

৩১. ক্যাম্পো ফর্মিও সন্ধির দুটি শর্ত লেখো।
➛ ১৭৯৭ খ্রিস্টাব্দে অস্ট্রিয়া ও ফ্রান্সের মধ্যে স্বাক্ষরিত ক্যাম্পো ফর্মি ও সন্ধির দুটি শর্ত ছিল—① বেলজিয়ামের ওপর ফ্রান্সের কর্তৃত্ব অস্ট্রিয়া মেনে নেয় এবং ② লোম্বার্ডি, জেনোয়া এবং নেদারল্যান্ডসের কিছু অংশ অস্ট্রিয়া ফ্রান্সকে প্রদান করতে বাধ্য হয়।

৩২. কনস্যুলেট ও ডাইরেক্টরিরর শাসনের মধ্যে দুটি সাদৃশ্য লেখো।
➛  ফ্রান্সে কনস্যুলেট ও ডাইরেক্টরির শাসনের মধ্যে দুটি সাদৃশ্য ছিল— ① দুটি শাসনেই শাসকগণ ফ্রান্সে সাম্রাজ্যবাদী নীতি বজায় রেখেছিল এবং ② দুটি শাসনেই ফ্রান্সের অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক ক্ষেত্রে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়।

৩৩. নেপোলিয়নের যুগ কাকে বলে?
➛ ১৭৯৯ খ্রিস্টাব্দে ফ্রান্সের প্রথম কনসাল হওয়ার পর থেকে ১৮১৪ খ্রিস্টাব্দে ফ্রান্সের সম্রাট থাকা পর্যন্ত সময়কালকে ‘নেপোলিয়ানের যুগ' হিসেবে অভিহিত করা হয়। ওই সময়কালে ফ্রান্স তথা ইউরোপে তাঁকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক প্রভৃতি ক্ষেত্রে বেশকিছু পরিবর্তন ঘটতে দেখা যায়।

৩৪. কত খ্রিস্টাব্দে কাদের মধ্যে নীলনদের যুদ্ধ হয়েছিল?
অথবা, নীলনদের যুদ্ধ কবে, কাদের মধ্যে হয়েছিল ?
➛ ১৭৯৮ খ্রিস্টাব্দে ফ্রান্স ও ইংল্যান্ডের মধ্যে নীলনদের যুদ্ধ হয়েছিল।

৩৫. ‘কনস্যুলেট শাসন' কী?
➛ ১৭৯৯ খ্রিস্টাব্দে নেপোলিয়ন ফ্রান্সে ডাইরেক্টরির শাসনের অবসান ঘটিয়ে একটি নতুন শাসনব্যবস্থার প্রবর্তন করেন। নতুন এই শাসনব্যবস্থায় শাসনভার অর্পিত হয় নেপোলিয়নসহ মোট তিনজন কনসালের হাতে এটিই ‘কনস্যুলেট শাসন' নামে পরিচিত ছিল।

৩৬. ‘১৮ ব্লুমেয়ার' বলতে কী বোঝো? 
➛ ১৭৯৯ খ্রিস্টাব্দের ৯ নভেম্বর নেপোলিয়ন ফ্রান্সে ডাইরেক্টরি শাসনের অবসান ঘটিয়ে কনস্যুলেট নামে এক নতুন শাসনব্যবস্থা প্রবর্তন করেন। ফরাসি বিপ্লবী ক্যালেন্ডার দিনটি হল ১৮ ব্লুমেয়ার। তাই ঘটনাটিকে ১৮ ব্লুমেয়ার ঘটনা বলে অভিহিত করা হয়।

৩৭. কবে, কোথায় নেপোলিয়নের জন্ম হয়েছিল?
➛ ১৭৬৯ খ্রিস্টাব্দের ১৫ আগস্ট ভূমধ্যসাগরের কর্সিকা দ্বীপে নেপোলিয়ন জন্মগ্রহণ করেন।

৩৮. কনকর্ডাট কী? 
অথবা, কনকর্ডাট কত খ্রিস্টাব্দে কাদের মধ্যে স্বাক্ষরিত হয়?
➛ ফরাসি বিপ্লবের প্রারম্ভে ফরাসি সংবিধান সভা চার্চকে রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে স্থাপন করার ফলে পোপের সঙ্গে ফরাসি সরকারের বিরোধ শুরু হয়েছিল। নেপোলিয়ন পোপ সপ্তম পায়াসের সঙ্গে ১৮০১ খ্রিস্টাব্দে এক চুক্তির মাধ্যমে এই বিরোধিতার অবসান ঘটান। এই চুক্তিই কনকর্ডাট বা ধর্মমীমাংসা চুক্তি নামে পরিচিত।

৩৯. ব্যাংক অফ ফ্রান্স কে, কত খ্রিস্টাব্দে গঠন করেন?
➛ ১৮০০ খ্রিস্টাব্দে ফ্রান্সের শাসক নেপোলিয়ন ব্যাংক অফ ফ্রান্স গঠন করেন।

৪০. কোড নেপোলিয়নের গুরুত্ব লেখো।
➛ কোড নেপোলিয়ন গুরুত্বপূর্ণ ছিল। কারণ—(ক) এর প্রধান নীতিগুলি সেই সময়কালের হিসেবে যথেষ্ট আধুনিক ছিল এবং (খ) এটির অনেক আইনই পরবর্তী সময় বিভিন্ন দেশের আইনব্যবস্থায় গ্রহণ করা হয়।

৪১. নেপোলিয়নকে ‘দ্বিতীয় জাস্টিনিয়ান' বলা হত কেন?
➛ নেপোলিয়ন ফ্রান্সে ‘কোড নেপোলিয়ন' চালু করেন। এই আইন ছিল অনেক বেশি আধুনিক। এর মাধ্যমে ফ্রান্সের বিভিন্ন প্রদেশে প্রচলিত আইনগুলির মধ্যে তিনি সমতাবিধান করেন। এই আইনের সংস্কার তাঁর উল্লেখযোগ্য কীর্তি। এই কারণে তাঁকে ‘দ্বিতীয় জাস্টিনিয়ান’ বলা হয়।


অধ্যায় ২ : বিপ্লবী আদর্শ, নেপোলিয়নীয় সাম্রাজ্য ও জাতীয়তাবাদ
✹ মার্ক - ১ (
SAQ Question)
✹ মার্ক - ২ নোটস
✹ মার্ক - 4 /8 নোটস


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)